অরিন্দম বাগ ও হরষিত সিংহ, মালদা: শহর লাগোয়া আদিবাসী গ্রাম। ফলে শহরের ছোঁয়া স্পষ্ট এলাকায়। কিন্তু সেই শহর সংলগ্ন আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামেই যখন এক প্রৌঢ়াকে ডাইনি অপবাদ দেওয়া হয়, তখন সত্যিই সমাজের অগ্রগতিকে দাঁড়াতে হয় কাঠগড়ায়। কয়েক বছরের মধ্যেই একে একে দুই ছেলের মৃত্যু। অসুস্থ হয় স্বামী, মেয়ে। এরপর থেকেই প্রৌঢ়াকে ডাইনি অপবাদ দিতে শুরু করে পুত্রবধূ ও তার মা।
অভিযোগ, ডাইনি অপবাদ দিয়ে ওই গৃহবধূকে পুড়িয়ে মারার হুমকিও দেওয়া হয়। এনিয়ে ইংরেজবাজার থানার দ্বারস্থ হয়েছেন ওই মহিলা। যদিও প্রতিবেশীদের দাবি, পারিবারিক বিবাদের জেরেই মারধর করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ অভিযুক্ত গৃহবধূ ও তার দিদিকে আটক করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
ইংরেজবাজার (English Bazar) ব্লকের যদুপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েতের জহুরাতলা গ্রাম। শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে এই গ্রাম। প্রৌঢ়াকে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টারও অভিযোগ ওঠে গৃহবধূর বিরুদ্ধে। প্রতিবেশীরা আক্রান্তকে উদ্ধার করে মালদা মেডিকেলে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর পুলিশের দ্বারস্থ হন মহিলা।
প্রৌঢ়ার আক্ষেপ, ‘দিনের পর দিন ধরে আমাকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে বৌমা, ছেলে অত্যাচার করত। এদিন বৌমা ডাইনি অপবাদ দিয়ে আমাকে মারধর শুরু করে। আগুন দিয়ে পোড়ানোর চেষ্টা করে। গ্রামবাসী না ছুটে এলে আমাকে শেষ করে দেওয়া হত। তাই পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রৌঢ়ার স্বামী বর্তমানে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে কোনওমতে চালকের কাজ করেন। তাঁদের চার ছেলে, দুই মেয়ে। প্রায় ৭-৮ বছর আগে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে এক ছেলের মৃত্যু হয়। কয়েক বছরের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় আরেক ছেলের। একই আঙিনায় থেকেও ভিন্ন বসবাস শুরু করেন অপর এক ছেলে ও বৌমা।
প্রায় তিন বছর আগে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন ওই গৃহবধূর স্বামীও। টিবিতে আক্রান্ত হন তাঁদের এক মেয়েও। এরপরেই থেকে তাঁকে ডাইনি অপবাদ দিতে শুরু করে পুত্রবধূ।
প্রৌঢ়ার স্বামীর কথায়, ‘অসুস্থ হয়ে দুই ছেলের মৃত্যু হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেছিলাম বাঁচাতে পারিনি। আমি নিজে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। কোনওমতে সপ্তাহে দু-তিন দিন ছোটখাটো চালকের কাজ করি। মেয়েও টিবিতে আক্রান্ত। ছেলে ও বৌমা আলাদা খাওয়াদাওয়া করে। কিছুদিন ধরে বৌমা আমার স্ত্রীর ওপর অত্যাচার শুরু করেছে। ডাইনি অপবাদ দিয়ে আমার স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার হুমকিও দিয়েছিল। এনিয়ে আমার স্ত্রী পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছে।’
আক্রান্ত মহিলার ছেলের দাবি, ‘কোনওরকম ডাইনি অপবাদ নয়, পারিবারিক কারণেই বৌমা শাশুড়ির মধ্যে ঝামেলা।’
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চ সভাপতি সুনীল দাসের কথায়, ‘ঘটনাটি শুনে অবাক লাগছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন গ্রামগুলিতে সচেতনতা শিবির করা হচ্ছে। বর্তমানে মানুষ অনেকটাই সচেতন হয়েছে। গ্রামে গ্রামে গিয়ে আরও বেশি করে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হবে। তবে বর্তমানে পারিবারিক বিবাদগুলিকেই ডাইনি অপবাদ দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মানুষকে আরও বেশি সচেতন হতেহবে।’