শুভদীপ শর্মা ও কৌশিক দাস, ক্রান্তি: কাঠামবাড়ির জঙ্গলে খড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে রবিবার হাতির হামলায় (Elephant Assault) দুজনের মৃত্যু হল। শনিবারও এখানে হাতির আক্রমণে একজনকে প্রাণ হারাতে হয়। এভাবে একই জঙ্গলে দু’দিনে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন বন দপ্তর। জঙ্গলে কোনও হাতি আক্রমণাত্মক হয়ে এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে কিনা, তা খোঁজার জন্য ছয়জনের একটি বিশেষ টিম গঠন করেছে বন দপ্তর। এদিকে, গত চারদিনে জেলার হাতির হামলায় চারজনের মৃত্যুর পর জঙ্গলে সাধারণের প্রবেশ বন্ধে লাগাতার প্রচারের পাশাপাশি কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও বন দপ্তর সূত্রে খবর।
ক্রান্তি ব্লকের বৈকুণ্ঠপুর বন বিভাগের কাঠামবাড়ির জঙ্গলে রবিবার সকালে খড়ি সংগ্রহ করতে গিয়েছিল আনন্দপুর চা বাগানের স্কুল লাইনের কয়েকজনের একটি দল। জঙ্গলের ফুলঝোরা-১ নম্বর কম্পার্টমেন্টে যখন ছেলেদের ওই দলটি খড়ি সংগ্রহ করতে ব্যস্ত, তখনই একটি হাতি তেড়ে আসে তাঁদের দিকে। দলের বাকি সদস্যরা পালিয়ে গেলেও হাতির মুখে পড়ে যান ৪২ বছরের রাজেন ওরাওঁ। হাতির হামলায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রাজেনের। খবর পেয়ে বনকর্মী ও ক্রান্তি ফাঁড়ির পুলিশ এসে রাজেনকে মালবাজার সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জানিয়ে দেন, তিনি আর বেঁচে নেই।
ঘটনার রেশ কাটার আগেই রবিবার বিকেলে রাজাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর বারোঘরিয়া শালবাড়ি গ্রামের বেশ কয়েকজন ফের খড়ি সংগ্রহে ফুলঝোরা বিটে যান। একইভাবে তাঁদের দিকেও একটি হাতি তেড়ে আসে। হাতির আক্রমণে ৫৫ বছরের টেপরা মোহাম্মদের মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই। গুরুতর আহত হন লাইলি বেগম (৪৫) ও কুলসুম নেছা (৪২)। খবর পেয়ে পুলিশ এসে আহত দুজনকে মাল সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবারও শিবচুর জঙ্গলে হাতির হামলায় বাইকে সওয়ার এক মহিলার মৃত্যু হয়। শিবচুর জঙ্গলে অন্য কোনও হাতির হামলায় ওই মহিলার মৃত্যু হলেও কাঠামবাড়ির জঙ্গলে গত দু’দিনে একই হাতির হামলায় এই মৃত্যুগুলো ঘটছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে বন দপ্তর। খড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে হাতির হামলার মুখে পড়ে যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে হাতির বিবরণ নেওয়া হচ্ছে। যে এলাকায় এই ঘটনা হয়েছে, সেখানে নজরদারি চালাচ্ছে বন দপ্তর। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’-একদিন ধরে অল্প উচ্চতার একটি মাকনা হাতিকে জঙ্গলের ওই এলাকায় দেখা গিয়েছে। অনেকের দিকে তেড়েও এসেছে হাতিটি। সেই হাতিটিই এই আক্রমণের ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে বন দপ্তর সূত্রে খবর।
ডিএফও’র কাছে পুরো ঘটনার রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে বলে জানান উত্তরবঙ্গের উত্তর মণ্ডলের মুখ্য বনপাল শ্যামকুমার মোলে। তাঁর কথায়, ‘জঙ্গলে যাতে কেউ প্রবেশ না করেন, সেজন্য নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। কেউ যদি নিয়ম ভেঙে জঙ্গলে প্রবেশ করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বৈকণ্ঠপুর বন বিভাগের ডিএফও রাজা এম বলেন,‘কোনও নির্দিষ্ট হাতি আক্রমণ করছে কিনা, তা খোঁজার জন্য বনকর্মীদের ৬ সদস্যের একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি যাতে কেউ জঙ্গলে প্রবেশ না করেন, সেজন্য নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।’