শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: হাতি তাড়াতে এবার ডুয়ার্সে দক্ষিণ আফ্রিকান ‘দাওয়াই’ (Elephant)। দাওয়াই বলতে গোবরের সঙ্গে শুকনো লংকাগুঁড়ো মিশিয়ে ঘুঁটে তৈরি করে পোড়ানো। তাতে যে ধোঁয়া বা গন্ধ হবে, তাতে হাতি আশপাশে আসবে না বলে দাবি। এখনও এমন দাওয়াইয়ের প্রয়োগ শুরু না হলেও, ব্যবহারের জন্য একাধিক উপদ্রুত চা বাগানে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে বন দপ্তর ও পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলির আলোচনা চলছে। বুধবার ডায়না ও গরুমারার জঙ্গল লাগোয়া বামনডাঙ্গা চা বাগানের বিছলাইনে মানুষ ও বন্যপ্রাণের সংঘাত সংক্রান্ত একটি সচেতনতা শিবিরে এই নয়া মডেলের কথা উঠে আসে। বন দপ্তরের খুনিয়া রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার সজল দে বলেন, ‘ডুয়ার্স জাগরণ নামে একটি পরিবেশপ্রেমী সংস্থা বিষয়টির ওপর আলোকপাত করেছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দ্রুত পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হবে।’ ওই সংস্থাটির কর্ণধার ভিক্টর বসু বলেন, ‘হাতি তাড়ানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত কম খরচের একটি উপায় এমন ঘুঁটে। মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলিতে এই পদ্ধতি প্রচলিত। আমাদের এখানে কেরলের কয়েকটি স্থানে ব্যবহার করা হয়। সাফল্যের হার অত্যন্ত ভালো। আশা করছি এখানেও কাজে দেবে।’
৫ কিলো গোবরের সঙ্গে ১ কিলো লংকাগুঁড়ো, সঙ্গে প্রয়োজন মতো জল, এমন মিশ্রণেই তৈরি করতে হবে ঘুঁটে। সারারাত যাতে জ্বলে তার জন্য আকার হতে হবে বড়, বলছেন পরিবেশপ্রেমীরা। তাঁদের বক্তব্য, হাতি তাড়াতে বা হাতি যাতে দূরে দাঁড়িয়ে থাকে, তার জন্য এই ঘুঁটে অত্যন্ত কার্যকর ওষুধ। তবে রাখতে হবে বাড়ির থেকে অনেকটা দূরে। অন্যথায় সাধারণের বাড়িতে থাকাটা হয়ে উঠবে কষ্টকর। ডুয়ার্স জাগরণ সূত্রে খবর, বামনডাঙ্গার পাশাপাশি নিউ ডুয়ার্স চা বাগানের টিনলাইন, দেবপাড়া চা বাগানেও বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বনকর্তারা মনে করেন, চা বাগানগুলিতে গোবর সহজেই উপলব্ধ। পাশাপাশি, প্রয়োজনে শ্রমিক পরিবারগুলি লংকার চাষ করতে পারবে। এতে ঘরোয়া চাহিদা মেটার পাশাপাশি হাতি তাড়ানোর কাজেও লাগবে। এই টোটকা হাতির পক্ষেও ক্ষতিকর নয়। কীভাবে এমন ঘুঁটে তৈরি করতে হবে, তা মহিলাদের শেখানোর পরিকল্পনাও রয়েছে পরিবেশপ্রেমী সংগঠনটির।
এদিকে, হাতি তাড়াতে বামনডাঙ্গায় কয়েকজন বাসিন্দাকে নিয়ে একটি কুইক রেসপন্স টিম তৈরি করে দেওয়া হয়েছে বন দপ্তরের তরফে। বন্যপ্রাণী লোকালয়ে এলে বন দপ্তরকে খবর দেওয়ার পাশাপাশি কেউ যাতে কাছে না যান, তা নিশ্চিত করা হবে টিমটির কাজ।