তন্দ্রা চক্রবর্তী দাস, কোচবিহার: প্রায় দেড় মাস ধরে চলছে মাতৃমূর্তি তৈরির কাজ। কলকাতার কুমোরটুলির শিল্পীরা প্রত্যেক বছরের মতো এ বছরও এসেছেন পূর্ব হাজরাপাড়ার সংহতি ক্লাবে দুর্গামূর্তি তৈরি করতে। তাঁদের হাতে একটু একটু করে রূপ পাচ্ছে মৃন্ময়ী মূর্তি। সাড়ে তিন দশকেরও আগে ক্লাবের তরফে তৈরি করা হয় স্থায়ী মণ্ডপ। প্রত্যেক বছর সেখানেই মায়ের আরাধনা হয়। এবছরও তার ব্যতিক্রম নয়।
এবছর সেই স্থায়ী মণ্ডপে কোচবিহারের (Cooch Behar) শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় ফুটে ওঠা মিশরের কিছু খণ্ডচিত্র দেখা যাবে বলে জানালেন উদ্যোক্তারা। সংহতি ক্লাবের সেক্রেটারি মিলনকুমার দাস বললেন, ‘এবারের পুজোর (Durga Puja 2025) বাজেট অনেকটাই কমিয়ে ১২ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। কারণ সারাবছর আমাদের সমাজসেবামূলক নানা অনুষ্ঠান চলতে থাকে। রক্তদান থেকে শুরু করে বৃক্ষরোপণ, দুঃস্থদের সাহায্য করা হয়। পাশাপাশি পয়লা বৈশাখ, পঁচিশে বৈশাখ সহ বছরের বিভিন্ন সময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ক্লাবের তরফে।’ আর সেই অনুষ্ঠানে পাড়ার মহিলাদের অংশগ্রহণ থাকে অনেকটাই।
এ বছর তাঁদের পুজোর ৬৪তম বর্ষ, বললেন পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রাজু ঘোষ। তিনি জানান, ২০২৩ সালে তাঁদের ক্লাবের ঠাকুর বিশ্ব বাংলায় প্রথম হয়েছিল। এ বছর মানিক পাল সহ মোট ছয়জন মৃৎশিল্পী এসেছেন। আলোকসজ্জায় থাকছে চন্দননগরের আলো।
আর মণ্ডপে থাকছে মিশরীয় চিত্রকলার ছোঁয়া। সংহতি ক্লাবের মণ্ডপে ঢুকলে দর্শনার্থীরা যেন এক টুকরো মিশর দেখতে পান, সেই চেষ্টাই করছেন কোচবিহারের দুই শিল্পী সৌভিক বণিক এবং সূর্যজ্যোতি পাল। দুই শিল্পীর আটজনের দল কাজ করছে। পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব জিনিসপত্র দিয়ে মণ্ডপ তৈরির ভাবনা রয়েছে। ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ, মাটি, বাঁশের চাটাই ইত্যাদি। শিল্পী সৌভিক বণিক বললেন, ‘মিশরীয়রা যে ধরনের ধর্মীয় মূর্তি, প্রতীক ব্যবহার করতেন, সেগুলো দিয়ে মণ্ডপ সাজিয়ে তোলা হবে। এছাড়া মিশরে ফ্যারাওদের পিরামিডের ভেতরে থাকা চিত্র ম্যুরালের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হবে। বাঁশের চাটাইয়ের ওপর মাটি লেপে কাজটি করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
পুজোর আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। তাই ক্লাবের সদস্যরা চাঁদা তোলা থেকে পুজোর অন্যান্য আয়োজনে ব্যস্ত। কারা কোন দায়িত্বে থাকবেন, সেটা নিয়েও চলছে ব্যস্ততা। পঞ্চমীতে পুজো উদ্বোধন করা হবে। আর তাই কোনওরকম সময় নষ্ট না করে দিনরাত এক করে সকলে কাজ করে যাচ্ছেন। যাতে পুজোর কটা দিন দর্শনার্থীরা এসে খুশি হতে পারেন।