দুর্গাপুজো তো আসলে মাতৃশক্তির আরাধনা। কিন্তু একসময় আমাদের দেশে নারীদের রাখা হত অন্দরমহলে। অফিস, আদালত তো দূর অস্ত! তাঁদের পড়াশোনা করারই উপায় ছিল না। সেইসঙ্গে ছিল বহুবিবাহ, সতীদাহপ্রথার মতো কুপ্রথাও। আজকের দিনে যা ভাবাই যায় না। এবছর ফালাকাটা কলেজপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসবে থিমে তুলে ধরা সেই ভারত মাতার কৃতী, লড়াকু দুহিতাদের।
ভাস্কর শর্মা, ফালাকাটা: লীলা শেঠ থেকে সরোজিনী নাইডু, লতা মঙ্গেশকর থেকে দ্রৌপদী মুর্মু, কে নেই তালিকায়! ভারত মায়ের কৃতী, লড়াকু দুহিতাদের কাহিনী এবার জায়গা পাবে ফালাকাটা (Falakata) কলেজপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসবে। একেবারে সূক্ষ্ম সুতোয় তাঁদের মুখের ছবি ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। সঙ্গে থাকছে রাজা রামমোহন রায় এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বিশেষ শ্রদ্ধা নিবেদন। সবমিলিয়ে কলেজপাড়ার পুজোর থিমে এবার স্থান পাচ্ছে ভারতবন্দনা। তাদের থিমের নাম রত্নগর্ভা। উদ্যোক্তারা বলছেন, এবার তাঁদের ৪৯তম দুর্গাপুজো (Durga Puja 2025)। তবে ৪৯ বছরেই তাঁরা ৫০-এর ছোঁয়া দিতে তৈরি হচ্ছেন।
কলেজপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সম্পাদক প্রহ্লাদ দাস বলেন, ‘রড, বাঁশ, মশারির নেট ও সুতো দিয়ে আমাদের পরিবেশবান্ধব প্যান্ডেল তৈরি হচ্ছে। ভারত মায়ের কৃতী, লড়াকু দুহিতাদের এবার সুঁতোর মাধ্যমে প্যান্ডেলে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়াও প্রায় ৪৫ ফুট উঁচু প্যান্ডেলজুড়ে নানা কাহিনী থাকবে।’
প্রায় চার মাস আগে দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি পড়েছিল কলেজপাড়ায়। ফালাকাটার বিগ বাজেটের অন্যতম কলেজপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজো। খুঁটিপুজোর দিনই চমক যে থাকছে তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। পুজোর দিন যত এগিয়ে আসছে প্যান্ডেল, প্রতিমায় ডুয়ার্সবাসীকে টেক্কা দিতে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা। কলেজপাড়ার থিমে এবার রত্নগর্ভা। থিম মেকার রিন্টু দাস। বাজেট প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা। প্রায় ১০০ জনের উপরে দেশের নারীদের ছোট কাহিনী সুতোর মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। সঙ্গে থাকছে এলইডির কারসাজি। মূলত আলোর কারসাজির মাধ্যমেই গোটা থিম প্যান্ডেলে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে।
ফালাকাটা কলেজপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবের অন্যতম কর্তা শংকর ঘোষের কথায়, ‘প্যান্ডেলে ঢোকার মূল গেটে একটি ২০ ফুটের রামমোহন রায়ের মূর্তি বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। এই মূর্তির নীচ দিয়েই মূল প্যান্ডেলে প্রবেশ করতে হবে। সেখানে আবার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরেরও একটি মূর্তি বসানো থাকবে। আমাদের বিশ্বাস প্রতিমা, থিম এবং আলোকসজ্জায় বরাবরের মতো এবারও আমরা অন্যদের টেক্কা দেব।’
মণ্ডপে শোভা পাবে সাবেকি ধাঁচের প্রতিমাও। এছাড়াও মন্দির এবং পুজোর জন্যও আলাদা প্রতিমা তৈরি হচ্ছে কলেজপাড়ায়। থাকছে চন্দননগরের আলোকসজ্জা। ধূপগুড়ি মোড় এলাকায় একটি বিশালাকার তোরণ বানানো হচ্ছে। কলেজপাড়া যে শুধু থিম, প্রতিমায় চমক দেয় তা কিন্তু নয়। পুজোর দিনগুলিতে মন্দিরের সামনে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দুঃস্থদের বিতরণ করা হয় বস্ত্র। পুজো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সামাজিক কাজ নিয়ে এবার পুজো অন্য মাত্রায় যেতে চলেছে কলেজপাড়ায়। ডুয়ার্সবাসী কলেজপাড়ার পুজো দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন।