সন্দীপ বসাক, গঙ্গারামপুর: আনুমানিক ৩৫০ বছরের বেশি সময় পূর্বে বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহি জেলার ভানপুর গ্রামের চৌধুরী জমিদারবাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল। বর্তমানে জমিদারি নেই, কিন্তু পুজো রয়েছে। সেই পুজো এখন হয় গঙ্গারামপুর ব্লকের মহারাজপুর গ্রামে। এই পুজো (Durga Puja 2025) গ্রামবাসীর কাছে বাবুর বাড়ির পুজো নামে পরিচিত।
সূচনা পর্ব থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশেই পুজোটি হত। কিন্তু ১৯৬২ সালে ভানপুর গ্রামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। তাই ১৯৬২, ১৯৬৩, ১৯৬৪ সালে সেই পরিবারের সদস্য স্বর্গীয় যামিনীমোহন চৌধুরী মালদার সিংহাতলা গ্রামের বাড়িতে মায়ের পুজো করেন। এরপর জমি বিনিময়ের মাধ্যমে চৌধুরীবাড়ির সদস্যরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসেন। এরপর ১৯৬৫ সালে পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছেতে তাঁদের পুরোনো মন্দির ও পঞ্চমুণ্ডি থানের মাটি মহারাজপুরের জমিদারবাড়িতে এনে সেখানে মায়ের মণ্ডপ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই বছর থেকে মহারাজপুর গ্রামেই পুজো হচ্ছে।
জমিদারবাড়ির প্রতিষ্ঠিত নারায়ণ শীলাকে মহালয়ার দিন মালদার চৌধুরীবাড়ি থেকে আনা হয় ও ভাইফোঁটার আড়াই দিন পর পর্যন্ত এখানে নারায়ণের পুজো হয়। পঞ্চমীতে মা মনসার পুজো, সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত মনসা গান ও একাদশী তিথিতে মনসা গানের সমাপ্তি হয়। পুজোর দিনগুলিতে বাড়ির তৈরি নাড়ু, মুড়কি, মুড়ি, লুচি, বোঁদে, সবজি সহ খিচুড়ি ভোগ নিবেদন করা হয় ও রাতে সপ্তমীতে সাত কেজি, অষ্টমীতে আট কেজি ও নবমীতে নয় কেজি অন্ন ভোগ এবং মাছ, সবজি, পরমান্ন, চাটনি মাকে ভোগ হিসাবে নিবেদন করা হয়। দশমীর দিন দিনেরবেলা পরিবারে আগুন জ্বালানোর প্রথা নেই। তাই নবমীর রাতে পরিবারের সদস্যরা মিলে সাত কেজি ময়দার লুচি রাতের বেলায় তৈরি করে রেখে দেন এবং দশমীর দিন সেই লুচি ও এক বাটি চিনি মাকে ভোগ হিসাবে নিবেদন করা হয়। তারপর দশমীর ঘট বিসর্জন দেওয়ার পর ওই পরিবারে অপরাজিতা পুজো ও সরস্বতীপুজোর প্রচলন রয়েছে।
পুজোর শুরু থেকে এখানে বলি দেওয়া হত। মোট ন’টি বলি দেওয়া হত। স্থানীয় বীরেন প্রামাণিক এই বলিকার্য সম্পন্ন করতেন। কিন্তু বীরেনের শারীরিক অসুস্থতার জন্য ২০১৩ সাল থেকে বলিপ্রথা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শেষবার মাকে উৎসর্গকৃত ছাগটিকে বলি না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা, ৯৬ বছর বয়সি মাধব সরকার বললেন, ‘১৯৩০ সাল থেকে এই বাড়ির পুজো দেখে বড় হয়েছি। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এই পুজো দেখতে আসত।’ এছাড়াও গ্রামবাসী অখিল প্রামাণিক, নরেশ প্রামাণিক, সন্তোষ সরকার, আমিন্দির প্রামাণিকরা বংশপরম্পরায় এই পুজোর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।