বুল নমদাস, নয়ারহাট: ইচ্ছে থাকলেও মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ঠাকুর দেখতে ওঁদের সংকোচ চিরদিনের। কারণ বৈষম্য, হেনস্তা ও কটূক্তির ভয়। তবে মা তো সবার। তাই পিংকি বর্মন, মিঠু বর্মন, ভারতী বর্মন, রূপালি দে, রমা ডাকুয়ারা নিজেরাই দেবীর আরাধনায় ব্রতী হয়েছেন। এঁরা সকলেই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। সমাজের মঙ্গলকামনার পাশাপাশি অশুভ শক্তির বিনাশ হোক তেমনটাই প্রার্থনা সকলের। বৈরাগীরহাটে বেশ কয়েকজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে থাকেন। তাঁদের বাড়ি সংলগ্ন সেবাশ্রমে যৌথ প্রয়াসে তাঁরা দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2025) সূচনা করেছিলেন। এবার তাঁদের পুজোর তৃতীয় বছর। বাজেট দেড় লক্ষ টাকা। পুজোর আয়োজনে বিশাল চাকচিক্য ও প্রাচুর্য না থাকলেও নিয়মনিষ্ঠায় কোনও খামতি থাকে না। এছাড়া পুজোয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বস্ত্র বিতরণের মতো কর্মসূচির আয়োজনও করা হয়। সঙ্গে দর্শনার্থীদের জন্য প্রসাদের ব্যবস্থা থাকে। প্রতিবার এই পুজোয় মানুষের ভিড়ও হয়। এবারও একইভাবে তাঁদের পুজোয় বহু মানুষ আসবেন বলেই আশা আয়োজকদের।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সংগঠন জীবনগাড়ি ফেরিওয়ালা-র কর্ণধার পিংকি বর্মনের কথায়, ‘হেনস্তা বা কটূক্তির ভয়ে আমাদের মন চাইলেও মণ্ডপে ঘুরে ঠাকুর দেখার সৌভাগ্য হয়নি। এই নিয়ে আমাদের আক্ষেপ ছিল। তাই নিজেদের পরিচালিত আশ্রমে আমরা দশভুজার আরাধনা শুরু করি।’ আর পাঁচজনের মতো মন ভরে প্রতিমা দর্শনের পাশাপাশি মায়ের কাছে অঞ্জলি দেওয়ার সুযোগ মেলায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা ভীষণ খুশি হন। পিংকির মতোই মিঠু বলেন, ‘নিজেদের হাতে পুজোর আয়োজন করতে পেরে আমাদের খুব ভালো লাগে। আয়োজনে জাঁকজমক না থাকলেও আন্তরিকতা ও নিয়মনিষ্ঠার মিশেলে আমাদের পুজোয় এবারও মানুষ অংশ নেবেন বলেই আশা করছি।’
এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তোলার পাশাপাশি নিজেদের দেওয়া অর্থে পুজোর খরচ চালান সকলে। বর্তমানে পুজো প্রস্তুতি চলছে। বৈরাগীরহাট বাজারের কাছে জীবনগাড়ি ফেরিওয়ালা অনাথভক্ত সেবাশ্রমের এক তলায় বর্তমানে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। পিংকি জানালেন, তাঁরা সমাজের আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই বাঁচতে চান। সমাজের মূল স্রোতে মিশে যেতে চান। অন্যদের সঙ্গে পুজোর আনন্দও ভাগ করে নিতে চান। সেই ভাবনা থেকেই তাঁদের দেবীর আরাধনা। এছাড়া পিংকিদের সেবাশ্রমে কয়েকজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থাকেন। তার সঙ্গে ২০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রয়েছেন। সকলেই একসঙ্গে পুজোর আনন্দে শামিল হবেন।