রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: স্নান করতে নেমে বুধবার তলিয়ে গিয়েছিলেন এক তরুণ। বৃহস্পতিবার উদ্ধার হয়েছিল তাঁর মৃতদেহ। এর পরেও দুধিয়ার (Dudhia) ছবির কোনও পরিবর্তন হয়নি। শুক্রবারও দুধিয়ায় মহানন্দা নদীতে জলকেলিতে ব্যস্ত ছিলেন মানুষজন।
তীব্র গরম থেকে বাঁচতে সুরার বোতল হাতে সোজা পাহাড়ি নদীর জলে যেতে দেখা গিয়েছে অনেককেই। এঁদের মধ্যে কেউ এসেছেন বিহার থেকে, আবার কেউ শিলিগুড়ি থেকে। কেউ কেউ আবার প্রতিবেশী রাজ্য সিকিম থেকেও এসেছিলেন। এলাকার গুমটি কিংবা রেস্তোরাঁ থেকে মদ নিয়ে সোজা পৌঁছে যাচ্ছিলেন নদীর পাড়ে। তারপর নদীর জলে নেমে সেখানেই চলছিল দেদারে সুরাপান।
বৃহস্পতিবার একটি তরতাজা প্রাণ চলে যাওয়ার পরেও শুক্রবার এলাকায় সারাদিন দেখা মেলেনি পুলিশের। ব্লক প্রশাসনের তরফেও এলাকায় গিয়ে তদন্ত কিংবা বিধিনিষেধ জারি করতে দেখা যায়নি। গোটা ঘটনায় দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে কার্সিয়াংয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক রায়ের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি এদিনও ফোন না ধরায় বক্তব্য মেলেনি। বৃহস্পতিবারও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
শিলিগুড়ির নিউ জলপাইগুড়ি থানার ফুলবাড়ির ধনতলার বাসিন্দা কৌশিক ঘোষ বুধবার বন্ধুদের সঙ্গে দুধিয়ায় নদীতে স্নান করতে গিয়েছিলেন। স্নান করতে নেমে হঠাৎই তলিয়ে যান কৌশিক। তাঁর বন্ধুরা বাঁচানোর চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়নি। সঙ্গে সঙ্গে খবর যায় মিরিক থানায়। খবর পেয়ে মিরিক থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে খোঁজখবর শুরু করে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। বৃহস্পতিবার সকালে কৌশিকের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বছর পাঁচেক আগে শৌভিক বসাক নামে একজন দুধিয়ায় তলিয়ে গিয়েছিলেন। এরকম আরও ঘটনা তো রয়েইছে। কিন্তু এরপরেও মানুষের উদ্দীপনায় ভাটা পড়েনি।
এলাকায় গিয়ে এদিন দেখা গেল কয়েকশো মানুষ ভিড় জমিয়েছেন নদীপাড়ে। কেউ নদীর ধারে গাছের ছায়ায় বসে মদ্যপান করছেন। কেউ আবার নদীর জলে বসে মদ্যপান করছেন। তাঁদের মধ্যে বিহারের বাসিন্দা শুভম ঝাঁ-র বক্তব্য, ‘এখানে মামাবাড়িতে ঘুরতে এসেছি। এত গরম পড়েছে। তাই ভাই-বোনেরা মিলে এসেছি নদীতে স্নান করতে।’ বৃহস্পতিবার কী ঘটেছিল, জানেন নিশ্চয়? শুভমের বক্তব্য, ‘আমরা বেশি জলে যাব না। তবে আমি সাঁতারও জানি।’
পাহাড়ি নদীতে বিপদ কোথায়? এই ধরনের নদীগুলো এমনিতেই খরস্রোতা হয়। তার ওপর যে কোনও সময় হড়পার আশঙ্কা থাকে। সেইসময় প্রাণহানির আশঙ্কা বেড়ে যায় বলে জানালেন স্থানীয়রা। তাছাড়া, সাঁতার না জানাও বিপদের একটা অন্যতম বড় কারণ হয়ে উঠতে পারে।