সানি সরকার ও পূর্ণেন্দু সরকার, শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি: ভারী বৃষ্টি নেই। তাই গজলডোবার তিস্তা ব্যারেজ এবং তিস্তা-মহানন্দা লিংক ক্যানালে (Teesta-Mahananda hyperlink canal) জলের চাপ নেই। তাই পূর্ব পরিকল্পনা মতো গজলডোবা তিস্তা ব্যারেজের তিস্তা-মহানন্দা লিংক ক্যানালে ড্রেজিংয়ের (Dredging) কাজ শুরু করল সেচ দপ্তর। ব্যারেজের নাব্যতা বাড়ানো, শিলিগুড়ি পুরনিগমের পানীয় জলপ্রকল্পে জল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি ফাঁসিদেওয়ার জলবিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্টে জল সরবরাহ ঠিক রাখতেই এই ড্রেজিং বলে সেচ দপ্তরের তিস্তা লেফট ব্যাংক ডিভিশন সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও এ বিষয়ে তিস্তা ব্যারেজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস মৌলিক কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
তিস্তা ব্যারেজের দু’দিকেই জল ছাড়া হয়। একদিকে মিলনপল্লি দিয়ে তিস্তা নদী হয়ে জলপাইগুড়ির দিকে জল প্রবাহিত হয়ে থাকে। পাশাপাশি, ফাঁসিদেওয়ার হাপতিয়াগছ, লিউসিপাকরি ও ভোলাগছের ৩টি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পেও এই লিংক ক্যানালের জল গিয়ে থাকে। অন্যদিকে, ব্যারেজের বাম দিকে গেটবাজার হয়ে ফুলবাড়ির তিস্তা-মহানন্দা লিংক ক্যানাল দিয়ে জল বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়। যা সেচের পাশাপাশি শিলিগুড়ি পুর এলাকায় পানীয় জল সরবরাহে অপরিহার্য। একাধিক অ্যাকোয়াডাক্টে জলপ্রবাহ বাড়ানোর কাজ চলে বাম দিকের ক্যানালের জলে। বর্তমানে ব্যারেজের মধ্যে অল্প জল থাকায় তা একপ্রান্তে আটকে রাখার জন্য ব্যারেজের বালি দিয়েই অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। এরপর প্রায় চার থেকে পাঁচ ফুট গভীরতায় ড্রেজিং করে ব্যারেজ থেকে বালি তোলা হচ্ছে। ড্রেজিংয়ে কাজে লাগানো হয়েছে বেশ কয়েকটি আর্থমুভার। ব্যারেজের ক্যানালে আর্থমুভার নামিয়ে টন টন বালি তুলে ডাম্পারে লোড করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়েছে ৩০টির বেশি ডাম্পার। ব্যারেজের কাছে তিস্তা-মহানন্দা লিংক ক্যানালের বিস্তীর্ণ এলাকায় ড্রেজিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই কাজের দায়িত্ব একটি সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে বলে জানান রাজ্যের খনিজ উন্নয়ন ট্রেডিং নিগমের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার একে সিং।
শিলিগুড়ি পুর এলাকায় পানীয় জল সরবরাহের ক্ষেত্রে এই লিংক ক্যানালের ওপর নির্ভরশীল পুরনিগম। ’২৩-র সিকিমের সাউথ লোনাক লেক বিপর্যয় এবং পরবর্তীতে অতিবৃষ্টির জেরে পলির স্তরে নাব্যতা হারায় তিস্তা নদীর পাশাপাশি ক্যানালটি। ফলে গত কয়েক মাস ধরে পাহাড়ে অতি ভারী বৃষ্টি হলেই ইনটেক ওয়েলে পলি জমায় শিলিগুড়ি শহরে পানীয় জল সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটছিল। সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছিল পুরনিগমকে। বুধবার এ ব্যাপারে পুরনিগমের পানীয় জল সরবরাহ বিভাগের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত বলছেন, ‘সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছিলেন মেয়র। তাঁর উদ্যোগ এবং মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। পাহাড়ে যদি প্রাকৃতিক বড় বিপর্যয় না ঘটে, তবে আশা করছি পানীয় জল সরবরাহে তেমন সমস্যা হবে না।’