Dredging | ড্রেজিংয়েও থাকবে নাব্যতা-জট 

Dredging | ড্রেজিংয়েও থাকবে নাব্যতা-জট 

ব্যবসা-বাণিজ্যের /BUSINESS
Spread the love


শুভ সরকার ও অভিজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার: উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি রুখতে একদিকে বাঁধ, আরেকদিকে ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা নিচ্ছে প্রশাসন। তিস্তা সহ করলা, লিস, ঘিসের মতো ডুয়ার্সের একাধিক নদীর নাব্যতা বাড়াতে এখন ড্রেজিংই (Dredging) ভরসা সেচ দপ্তরের। এদিকে সম্প্রতি শিলিগুড়িতে এসে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা আন্তর্জাতিক নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র সাফ জানিয়ে গেলেন, নদীর নাব্যতা বাড়াতে ড্রেজিং কোনও স্থায়ী সমাধান নয়। তাহলে কী করতে হবে? কল্যাণের স্পষ্ট উত্তর, ‘নদীকে তার নিজের মতো করে চলতে দিতে হবে। তাহলে বর্ষায় জলের যে বিপুল স্রোত থাকে, তার স্বাভাবিক গতিতেই পলি ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যাওয়ার কথা। প্রকৃতি যা করতে পারে, মানুষ তা কখনোই করতে পারে না।’

সেচ দপ্তরের উত্তর-পূর্ব বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিকও মেনে নিয়েছেন যে ড্রেজিং কোনও স্থায়ী সমাধান নয়। তিনি বলেন, ‘তবে এটা ছাড়া আর তো কোনও উপায়ও নেই। তাই এটাই করতে হবে। এটা অনেকটা পেনকিলারের মতো। সমস্যার সাময়িক সমাধান হবে ঠিকই কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবেই।’

অন্যান্য বছরের মতো এবছর বর্ষায় যাতে বন্যা পরিস্থিতির দুর্দশা না হয় উত্তরবঙ্গবাসীর, তাই আগেভাগেই ব্যস্ততা প্রশাসন ও সরকারের। ইতিমধ্যেই সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া উত্তরবঙ্গ সফর সেরে গিয়েছেন। জলপাইগুড়ি জেলায় পরিদর্শন করে গিয়েছেন কৃষি দপ্তরের মুখ্যসচিব ওঙ্কার সিং মিনা। সেচ দপ্তরের উত্তর-পূর্ব বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিকও জেলায় জেলায় বাঁধগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখেছেন। সেইসঙ্গে নদীর নাব্যতা বাড়াতে প্রশাসন ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা নিচ্ছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আবার নানা সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। যেমন এবছরের গোড়ায় আলিপুরদুয়ার সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী বলে গিয়েছিলেন বক্সায় জয়ন্তী নদী থেকে ড্রেজিংয়ের কথা। বর্তমানে জয়ন্তীর নদীখাত তো তার পাড়ের থেকেও উঁচুতে। একটু ভারী বৃষ্টি হলেই নদীতীরবর্তী এলাকার বানভাসি হওয়া অবশ্যম্ভাবী। সেই জয়ন্তী নদী তো রয়েছে জঙ্গলের কোর এলাকায়। গ্রিন বেঞ্চ আদৌ কি সেখানে ড্রেজিং করতে দেবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। তবে নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণের কথা অনুযায়ী, ড্রেজিং নিয়ে চিন্তাভাবনা করার থেকেও অনেক বেশি জরুরি বাঁধ নির্মাণ নিয়ে ভাবা। বেশি জরুরি নদীর জলের পরিকল্পনামাফিক ব্যবহার নিয়ে ভাবা।

ড্রেজিং নিয়ে কল্যাণের মন্তব্যের উত্তরে রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া কিছু বলতে চাননি। তবে তিনি বলেন, ‘ড্রেজিং তো অনেক দিন থেকেই হচ্ছে। তবে ২০১৬ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকার ড্রেজিংয়ের টাকা দিচ্ছে না। ফলে রাজ্য সরকারের কাজে সমস্যা হচ্ছে। তাই টেন্ডার করে বিভিন্ন নদীর ড্রেজিংয়ের দায়িত্ব বিভিন্ন সংস্থাকে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’

কৃষি থেকে শুরু করে শিল্প, শক্তি উৎপাদন, দৈনন্দিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নদীর জলের ওপর নির্ভরতা অনেকটাই বেশি। নদীর জলের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সেচের কাজে লেগে যায়। এছাড়া দৈনন্দিন ব্যবহারের কাজে প্রায় ১০ শতাংশ। শিল্পের জন্য আরও ২ থেকে ৫ শতাংশ। বাকি সামান্য অংশ পড়ে থাকে নদীর জন্য। সেই সামান্য জলের উপর নির্ভর করতে হয় গোটা বাস্তুতন্ত্রকে।  নদীর ইকোলজিক্যাল ফ্লো’র কথা বলেছেন কল্যাণ। অর্থাৎ, বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য নদীতে কতখানি জলপ্রবাহ জরুরি, আগে সেটা হিসেব কষে দেখা প্রয়োজন। তারপর বাকি জল প্রয়োজন মতো সেচ, শিল্প, গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাহলে নদীর নাব্যতা বজায় থাকবে। আর ড্রেজিংয়ের প্রয়োজনীয়তাও কমবে।

তিস্তার মতো নদীর ওপর তৈরি হওয়া একাধিক বাঁধ তার নাব্যতা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তেমনই কোনও নদীর নাব্যতা হ্রাসের আরেকটা কারণ হল নদীর গতিপথে থাকা পাহাড়ের ঢালের কৃত্রিম পরিবর্তন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাব্যতা রক্ষায় নদীর অববাহিকাজুড়ে পরিকল্পনা করতে হবে। যেসব এলাকা ভঙ্গুর, সেখানে যদি রাস্তা বানাবার মতো কাজ হয়, তাহলে ধস নামবেই। আর তাতে নদীর নাব্যতাও কমবেই। সেজন্য কেবল রাজ্য নয়, গোটা দেশেই পরিকল্পিত নদী-নীতির প্রয়োজনের কথা বলছিলেন কল্যাণ।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *