উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এক অত্যাধুনিক মোবাইল আর্টিলারি গান, অ্যাডভান্সড টাওয়েড আর্টিলারি গান সিস্টেম (ATAGS) পরীক্ষা করতে চলেছে ভারত। জানা গিয়েছে, রাজস্থানের মরুভূমি থেকে শুরু করে সিয়াচেনের বরফাবৃত উচ্চ শিখর পর্যন্ত, দেশের যেকোনও প্রান্তে এটি মোতায়েন করা যাবে। ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO) এই আর্টিলারি গান সিস্টেম তৈরি করেছে। নীচে দেওয়া হল এই অ্যাডভান্সড টাওয়েড আর্টিলারি গান সিস্টেম সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
ভবিষ্যতের সামরিক প্রয়োজন অনুধাবন করেই ডিআরডিও (DRDO)-র আর্মামেন্ট রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিশমেন্ট (ARDE)-কে ২০১২ সালে অ্যাডভান্সড টাওয়েড আর্টিলারি গান সিস্টেম (ATAGS) ডিজাইন ও তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
এআরডিই (ARDE)-র পরিচালক এ রাজু জানিয়েছেন,এই আর্টিলারি গান সিস্টেমকে উচ্চ পাল্লা, নির্ভুলতা, অপারেশনের ধারাবাহিকতা, দ্রুত ফায়ারিং ক্ষমতা এবং যেকোনও আবহাওয়া ও ভূখণ্ডে মোতায়েনের যোগ্যতার মতো উন্নত বৈশিষ্ট্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এই গান সিস্টেম বর্তমানে ব্যবহৃত গোলাবারুদ ব্যবহার করতে সক্ষম এবং এটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কমব্যাট কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম (ACCCS)-এর সঙ্গে নির্বিঘ্নে যুক্ত হতেও সক্ষম।
এই গান সিস্টেম (ATAGS) দুটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত, আপার ক্যারেজ এবং আন্ডারক্যারেজ। আপার ক্যারেজে অর্ডিন্যান্স অ্যাসেম্বলি (গানের ব্যারেল, ব্রিচ এবং মাজল ব্রেক), রিকয়েল সিস্টেম, ক্র্যাডল, স্যাডল, এলিভেটিং ও ট্র্যাভার্সিং মেকানিজম, লেয়ার স্টেশন, লোডার স্টেশন এবং গোলাবারুদ হ্যান্ডলিং সিস্টেম রয়েছে। আন্ডারক্যারেজে কাঠামোগত, স্বয়ংক্রিয় এবং সহায়ক ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত। এই সিস্টেমে একটি সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক ড্রাইভ রয়েছে, যা রক্ষণাবেক্ষণমুক্ত এবং ফিল্ড অপারেশনে গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য ভুমিকা পালন করতে সক্ষম। এর ফলে অপারেশন চলাকালীন কামান স্থাপন, শেল ও চার্জ লোড করা থেকে গান মোতায়েন সবকিছুই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হয়। এই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার ফলেই ফায়ারিং খুব দ্রুত করা সম্ভব।
এই সিস্টেমের নিজস্ব চালনা ক্ষমতা রয়েছে, যা একটি অক্সিলিয়ারি পাওয়ার ইউনিট(APU)-এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই সিস্টেমটি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উভয় ফায়ার মোডেই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এর জন্য এটি বিভিন্ন সাইটিং সিস্টেমে সজ্জিত। অপট্রনিক সাইট ব্যবহার করে প্রত্যক্ষ ফায়ার মোডে, কামানটি ১.৫ কিলোমিটার পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে। অপট্রনিক সাইটে একটি ডে ক্যামেরা, থার্মাল ইমেজিং এবং একটি লেজার রেঞ্জ ফাইন্ডার রয়েছে, যা ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে পারে।
এই কামানটি মাত্র ২.৫ মিনিটের মধ্যে ১০টি হাই-এক্সপ্লোসিভ শেল লক্ষ্যবস্তুতে নিক্ষেপ করতে পারে এবং বার্স্ট ফায়ার মোডে ৬০ সেকেন্ডে পাঁচটি রাউন্ড ফায়ার করতে পারে। গোলাবারুদের প্রকারভেদে এটি ৪৮ কিলোমিটার পর্যন্ত পাল্লায় শেল নিক্ষেপ করতে সক্ষম। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি ৬৮তম প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে এটি প্রথম জনসমক্ষে প্রদর্শিত হয়েছিল।