Dowhill | ভূতের ভয় কাটিয়ে ইচ্ছেপূরণের গন্তব্য

Dowhill | ভূতের ভয় কাটিয়ে ইচ্ছেপূরণের গন্তব্য

ভিডিও/VIDEO
Spread the love


তমালিকা দে, শিলিগুড়ি: গুগল সার্চবারে লিখতে হবে, ‘হন্টেড প্লেসেস ইন ইন্ডিয়া’। স্ক্রিনে ভেসে উঠবে একের পর এক লিংক। প্রায় প্রত্যেকটিতে কার্সিয়াংয়ের উজ্জ্বল উপস্থিতি। সৌজন্যে ডাউহিল (Dowhill)। ইউটিইউব-এও তাই। ভিডিওগুলোকে গা ছমছমে বানাতে সাহায্য করে ঘন পাইন বন আর কুয়াশায় মোড়া পরিবেশ। ভৌতিক গল্প বা সিনেমার চরিত্রের মতো দু’একখানা রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার লোভে পশ্চিমবঙ্গ তো বটে, দেশ-বিদেশ থেকে অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা সেখানে গিয়েছেন, যাচ্ছেন। তবে কিছুদিন আগে অবধি সাধারণ পর্যটকরা সেভাবে সেদিকে পা বাড়াতেন না।

ছবিটা ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে। কীভাবে মানুষের মন থেকে ‘ভয়’ দূর করে জায়গাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, সেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কার্সিয়াং বন বিভাগ। ডাউহিল পাইন ফরেস্টের পার্কটিকে (Dowhill Pine Forest Park) নতুনভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন স্কুল থেকে পড়ুয়াদের আনা হয় প্রকৃতি পাঠ শিবিরের জন্য।

‘ভূত’ নয়, ডাউহিলে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে উইশ ট্রি। বন দপ্তরের তরফে একটি আর্টিফিশিয়াল গাছ বসানো হয়েছে। পার্কে ঘুরতে এসে ইচ্ছেপূরণের জন্য অনেকেই উইশ ট্রি’র সামনে গিয়ে মনস্কামনা করছেন। রেঞ্জ অফিসার সম্বার্ত সাধু বললেন, ‘জনপ্রিয়তা দেখে আমরা মনস্কামনার পর গাছটিতে সুতো বেঁধে দেওয়ার ব্যবস্থা করব বলে ভাবছি।’

পাইন বনের কাছেই বনবস্তি। সেখানে বেশ কয়েকজন বাসিন্দা হোমস্টে খুলেছেন। রয়েছে ক্যাম্পেনিংয়ের বন্দোবস্ত। পর্যটনের হাত ধরে মজবুত হচ্ছে স্থানীয় অর্থনীতি। এ নিয়ে কথা হচ্ছিল এক হোমস্টে  মালিক অমিত থাপার সঙ্গে। তাঁর অভিজ্ঞতায়, ‘গত এক বছর ধরে দেখছি, ডাউহিলে রাত্রিযাপনের চাহিদা বাড়ছে। ভরা মরশুমে তো এখানে থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করেও ঘর পাওয়া যায় না অনেক সময়। তখন পর্যটকদের কার্সিয়াংয়ে থাকতে হয়।’

বিভিন্ন সময় সরকারি দপ্তর ও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে স্থানীয়দের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মূলত অর্গানিক ফার্মিং, অর্গানিক মশলা তৈরি, স্থানীয় খাবার ও জায়গাগুলোকে প্রচারের আলো আনা যায় কীভাবে ইত্যাদি বিষয়ে। এছাড়া বন্যপ্রাণ আচমকা হানা দিলে তৎক্ষণাৎ কী করা যেতে পারে, সেটাও হাতেকলমে শেখানো হচ্ছে তঁাদের। মাসকয়েক আগে রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হঁাসদা, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু পরিদর্শনে এসেছিলেন। ডাউহিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ ওঁরা-ও। অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজম (অ্যাক্ট)-এর কনভেনার রাজ বসুর কথায়, ‘ডাউহিলে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের অনেক জায়গা রয়েছে। সেই টানে দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা আসছেন। ভূতের ভয় বলে বাস্তবে কিছু নেই।’

‘ভৌতিক’ তকমার নেপথ্যে রয়েছে ডেথ রোড, স্থানীয়দের একাংশের অপ্রাকৃতিক ঘনঘটার সাক্ষী থাকার দাবি, স্কন্ধকাটা ভূত আর স্কুলকে ঘিরে লোকমুখে ছড়ানো অলৌকিক কাহিনী। যদিও এসব মনগড়া কাহিনী এবং অবৈজ্ঞানিক, দাবি কার্সিয়াং কলেজের প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক বিপ্লব দাসের। বললেন, ‘নয় বছর ধরে চাকরি সূত্রে কার্সিয়াংয়ে আছি। মাঝেমধ্যে ওদিকে যাই। তবে কোনওদিন ভূতুড়ে অভিজ্ঞতা হয়নি।’

গাড়ি ছুটে চলে কার্সিয়াংয়ের ভিড়ে ঠাসা হিলকার্ট রোড দিয়ে। পাশে ট্রয়ট্রেনের লাইন। কার্সিয়াং স্টেশন ছাড়িয়ে কিছুটা দূর গিয়ে ফের ইউটার্ন নিতে হয়। তারপর একটি সরু পথ বেয়ে উঠে যেতে হয় ওপরে। ওই রুটে রাজরাজেশ্বরী হল। সেদিকেই গন্তব্য। ইন্টারনেটে যার সঙ্গে সহাবস্থান করে রাজস্থানের ভানগড়, গুজরাটের ডুমাস বিচ, নয়াদিল্লির অগ্রসেন কি বাওলি ইত্যাদি।

শিলিগুড়ির দক্ষিণ ভারতনগরের বাসিন্দা ধীমান দে’র অন্যতম পছন্দের জায়গা ডাউহিল। তঁার কথায়, ‘কুয়াশার চাদড়ে মুড়ে থাকা জায়গাটির ঘন পাইন ফরেস্ট আমাকে বরাবর টানে। প্রতিবছর বেড়াতে যাই। তবে কোনওদিন ভয় পাওয়ার মতো হয়নি কিছু।’ একই কথা কোচবিহারের এক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী মজুমদারের।

‘ডাউহিল’ নামটি এসেছে একধরনের পাখির নাম থেকে। এই পাহাড়ে তাদের বাস। পাখিগুলোকে স্থানীয়রা নিজেদের ভাষায় ডাকেন ‘ডাও’(DOW) বলে। সেই থেকে নামকরণ। জনপদটির আশপাশে রয়েছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি স্কুল। রয়েছে ইকো পার্ক, ডিয়ার পার্ক, ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট স্কুল ও ফরেস্ট স্কুল মিউজিয়াম। ডাউহিল থেকে এগিয়ে গিয়েছে বাগোরা ও চিমনি যাওয়ার মিলিটারি রুট।

পর্যটক তো দূর, একসময় ঘন পাইন বনের কাছে দিনেরবেলাতেও যেতে ভয় পেতেন স্থানীয়দের একাংশ। বন দপ্তরের তরফে দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে মাসে গড়ে ছয় হাজারের কাছাকাছি পর্যটক এখানে আসছেন। পর্যটন মরশুমে সংখ্যাটি দশ হাজারে গিয়ে দঁাড়ায়। জিতেন ইয়েলমো হোমস্টে চালান ডাউহিলে। তঁার কথায়, ‘ভয়কে জয় করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন নানা বয়সিরা। আমাদেরও বেশ ভালো আয় হচ্ছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *