শুভদীপ শর্মা, লাটাগুড়ি: প্রতিবছর পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই ডুয়ার্স (Dooars) ও ডুয়ার্স লাগোয়া বিভিন্ন পাহাড়জুড়ে বিভিন্ন হোটেল-রিসর্টের বুকিং পুরো হয়ে যায়, সেখানে দ্বিতীয়াতেও ফাঁকা ডুয়ার্স ও পাহাড়ের বিভিন্ন হোটেল-রিসর্ট। এমনকি জঙ্গলেও বেড়াতে যাওয়ার পর্যটকদের দেখা নেই। পরিসংখ্যান বলছে, পুজোর আগে-পরে তো দূরের কথা পুজোর ক’দিনও পঞ্চাশ শতাংশ বুকিং এখনও বাকি রয়েছে। আর তাতেই মাথায় হাত পড়েছে কয়েক হাজার পর্যটন ব্যবসায়ী ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মানুষের। পর্যটন ব্যবসায়ীদের অভিমত, পাহাড়ে লাগাতার ধস, বৃষ্টি পর্যটকদের না আসার অন্যতম কারণ। পাশাপাশি জঙ্গলে এসে টিকিট পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে পর্যটকদের মধ্যে। এই দুই কারণে পর্যটকদের সংখ্যা কমছে পাহাড় ও সমতলে।
পর্যটন ব্যবসায়ীদের কাছে পুজোর মরশুম মানে আয়ের অন্যতম পথ। পুজোর মধ্যে পর্যটকদের ঢল নামে ডুয়ার্স ও ডুয়ার্স লাগোয়া বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায়। তবে চলতি বছর পরিস্থিতিটা একেবারেই ভিন্ন। রাত পোহালেই যেখানে তৃতীয়া সেখানে এখনও এই পর্যটন এলাকায় পুজোর ক’দিনের বুকিংও পঞ্চাশ শতাংশ বাকি। করোনাকাল বাদ দিলে, বিগত দীর্ঘদিনের পর্যটনের ইতিহাসে এই এলাকায় এমন খারাপ বুকিং হয়েছে কি না তা মনে করতে পারছেন না কোনও পর্যটন ব্যবসায়ী। শুধু পুজো নয়, চলতি বছরের শুরুতে, গ্রীষ্মের ছুটিতেও একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন এলাকার পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এভাবে চলতে থাকলে আগামীদিনে পর্যটন ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা পর্যটন ব্যবসায়ীদের। আলিপুরদুয়ারের পর্যটন ব্যবসায়ী তথা ডুয়ার্স ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি আগে কোনওদিন হয়নি। সরকারি সিদ্ধান্তেই পর্যটকদের জঙ্গলে যাওয়ার টিকিট লাগছে না। পর্যটকরা অনেকে ভাবছেন যদি বুকিং করে গিয়েও জঙ্গলে ঘুরতে না পারি তাহলে ডুয়ার্সে যাওয়ার মানে কী! আমরা সরকারের কাছে অনলাইন বুকিংয়ের পাশাপাশি ন্যূনতম পর্যটকদের কাছে টিকিট নেওয়ার দাবি জানিয়েছি। শুধু যে সমতলে এই পরিস্থিতি তা নয় পাহাড়েও পরিস্থিতি প্রায় একই।’
কালিম্পং জেলা ট্যুরিজম ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিজয়কুমার থাপার কথায়, ‘বেশিরভাগ রিসর্টের পুজোর ক’দিনের বুকিং এখনও হয়নি। অনেকেই খোঁজখবর নিচ্ছেন কিন্তু বুকিং করছেন না।’ খারাপ পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন লাভা হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নরবু ভুটিয়া। তিনি বলেন, ‘পুজোর আগে প্রতিবছর শুধু পুজো নয়, কালীপুজোর সময়েরও বুকিং ফুল হয়ে যায়। পরিস্থিতি এতটা কেন খারাপ হল তা বুঝে উঠতে পারছি না।’ বিভিন্ন হোটেল মালিক সংগঠনদের দাবি, সারাবছর ব্যবসা খারাপ থাকলেও পুজোর আগে ও পরে বুকিং ভালোই হয়, তবে এ বছর চিত্রটা একেবারেই আলাদা। ডুয়ার্সের জালসার এক হোমস্টের মালিক পার্থসারথি দাস জানান, গত সাত বছর ধরে হোমস্টে চালাচ্ছেন। পুজোর পাঁচদিন আগে থেকেই বুকিং হয়ে যেত। তবে এবার সপ্তমী ও দশমী পুরোপুরি ফাঁকাই রয়েছে। কেন এমনটা হল তার সদুত্তর জানা নেই বলে জানান তিনি। লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব বলেন, ‘প্রতিবছর যেখানে ক’টা রুমের বুকিং রয়েছে সেটা দেখার জন্য খাতা মেইনটেনান্স করতে হত কিন্তু চলতি বছর মুখে মুখেই পর্যটকদের বুকিংয়ের হিসেব রাখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ।’ হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যালের কথায়, ‘সিকিমগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে মাঝেমধ্যেই ধস নামছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই প্রচার অত্যন্ত খারাপভাবে হচ্ছে। কিন্তু রাস্তা যখন ঠিক হয়ে যাচ্ছে সেই প্রচার আর হচ্ছে না। এই অপপ্রচারও এবারের বুকিং না হওয়ার অন্যতম কারণ।’