উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার রাতে একটি নির্বাহী নির্দেশিকায় স্বাক্ষর করেছেন, যা আগামী ৭ই আগস্ট থেকে কার্যকর হতে চলেছে। এই নির্দেশিকার মাধ্যমে আমেরিকার বহু বাণিজ্য অংশীদারের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতি তথা আমেরিকার দীর্ঘদিনের জোট সঙ্গীদের (American alliances) কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৭টার পর এই নির্দেশিকাটি জারি করা হয়। গত কয়েকদিন ধরে শুল্ক সংক্রান্ত নানা তৎপরতার আবহে এই ঘোষণা করা হল। এর আগে হোয়াইট হাউস, প্রেসিডেন্ট-নির্ধারিত শুক্রবারের সময়সীমার আগেই বিভিন্ন দেশ এবং গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তি ঘোষণা করেছিল।
প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন যে, শুল্কের হারগুলোকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্যই তা কার্যকর হওয়ার তারিখ পেছানো হয়েছে। এই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ৬৮টি দেশ এবং ২৭ সদস্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য শুল্কের হার নির্ধারণ করা হয়েছে। যেসব দেশ এই তালিকায় নেই, তাদের জন্য ১০% হারে শুল্ক আরোপ করা হবে। ওই কর্মকর্তা জানান, শুল্কের হার নির্ধারণ করা হয়েছে আমেরিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশের বাণিজ্যিক ভারসাম্য এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রোফাইলের ওপর ভিত্তি করে।
বৃহস্পতিবার সকালে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাম-এর সঙ্গে ট্রাম্পের একটি ফোন আলাপ হয়। এই আলোচনার ফলস্বরূপ, আমেরিকার অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার মেক্সিকোর সঙ্গে ৯০ দিনের জন্য একটি আলোচনার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাম ‘এক্স’ (আগের টুইটার)-এ লিখেছেন, “আমরা আগামীকাল থেকে শুল্ক বৃদ্ধি এড়াতে পেরেছি এবং আলোচনার মাধ্যমে একটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি গঠনের জন্য ৯০ দিন সময় পেয়েছি।” ট্রাম্প এই আলোচনাকে “খুবই সফল” বলে উল্লেখ করে বলেন, এর মাধ্যমে দুই নেতা একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।
নতুন এই শুল্কনীতিতে ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দেখা গেছে। ভারতের সঙ্গে কৃষি ক্ষেত্রের বাজার উন্মুক্ত করার বিষয়ে আলোচনায় জটিলতা দেখা দেওয়ায় ভারতের পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার জন্য ভারতকে ‘অনির্দিষ্ট জরিমানা’র মুখে পড়তে হবে বলেও উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে তাদের রপ্তানির ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক মেনে নিয়েছে। এর বিনিময়ে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়ার পণ্যে আরোপ হচ্ছে ১৯ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক। এদিকে, বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ এখনও অমীমাংসিত। উভয় দেশ আগামী ১২ অগাস্টের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট চুক্তি করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এই নতুন শুল্ক আরোপের আগে হোয়াইট হাউস বেশ কিছু দেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে। বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি হয়। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইন-এর সঙ্গেও চুক্তি হয়েছে। ট্রাম্পের বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক জানিয়েছেন যে, কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ড তাদের সীমান্ত বিরোধে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পর তাদের সঙ্গেও চুক্তি হয়েছে।