দিনহাটা: একেই বোধহয় বলে, যেমন কথা, তেমনি কাজ। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে বাধা দেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে শনিবারই দিনহাটা কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে বামপন্থীদের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতারা। হুমকির ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই দিনহাটা শহরে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হল এসএফআইয়ের কোচবিহার জেলা সভাপতি জিতকুমার পাল ও সংগঠনের দিনহাটা জোনাল সভাপতি আবির দেবকে। বর্তমানে দুজনে গুরুতর আহত অবস্থায় দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রবিবারের এই ঘটনায় দিনহাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের স্থানীয় কয়েকজন নেতার নামে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে টিএমসিপি নেতৃত্ব।
প্রয়াত সিপিএম নেতা বেণুবাদল চক্রবর্তীর স্মৃতিতে এদিন ইন্টার স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলছিল দিনহাটা সোনিদেবী জৈন হাইস্কুলের মাঠে। এসএফআই ৪ বছর ধরে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। দিনহাটার বিভিন্ন স্কুল এই খেলায় অংশগ্রহণ করেছিল। এদিন প্রথম কয়েকটা খেলা নির্বিঘ্নে হয়ে যায়। এসএফআইয়ের অভিযোগ, তৃতীয় খেলা চলাকালীন তৃণমূলের লোকজন মাঠে আসে। তখন খেলা বন্ধ হয়ে যায়। এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি জিত সেই সময় খেলার মাঠে ঢোকেন। তাঁকে দেখতে পেয়েই চড়াও হয় আক্রমণকারীরা। গণ্ডগোলের আশঙ্কা বুঝতে পেরে দলের অন্য নেতারা তাঁকে নিয়ে খেলার মাঠ থেকে বেরিয়ে যান। টোটো ধরে দিনহাটার জোনাল সিপিএম অফিসে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। অভিযোগ, আক্রমণকারীরা তাঁদের পেছনে বাইক নিয়ে ধাওয়া করে। পথে ঝুড়িপাড়া মোড় সংলগ্ন এলাকায় টোটো থামিয়ে জিত ও অন্যদের নামানো হয়। তারপর বেধড়ক মারধর করা হয়। জিত ও আবিরকে ঘটনাস্থল থেকে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এসএফআইয়ের কোচবিহার জেলার সভাপতি জিত বলেন, ‘দিনহাটায় এখন আইনের শাসন আর নেই। তৃণমূল বরাবর পেশিশক্তি দিয়ে এসএফআইকে আটকানোর চেষ্টা করেছে। আজকেও দিনহাটার কয়েকজন নেতা স্কুটার নিয়ে ধাওয়া করে আমাদের। এরপর টোটো থামিয়ে মারধর করে।’
এদিকে, দিনহাটায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে এসএফআই কর্মীদের মারধরের অভিযোগ ছড়িয়ে পড়তেই প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে কোচবিহার শহর। রবিবার সন্ধ্যায় এসএফআইয়ের তরফে একটি প্রতিবাদ মিছিল সাগরদিঘি চত্বরে পুলিশ সুপারের দপ্তরে যায়। সেখানে তারা ধর্নায় বসে। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক প্রাঞ্জল মিত্র বলেছেন, ‘তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী আগে থেকেই আমাদের হুমকি দিচ্ছিল। পুলিশ সুপারকে শনিবারই ই-মেল মারফত অভিযোগ জানানো হয়েছিল। তারপরেও রবিবার দিনহাটায় আমাদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। দিনহাটা থানাতেও আমরা অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে আমরা পুলিশ সুপারের দপ্তরে ধর্নায় বসেছি।’ কোনও সুরাহা না হলে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।
সিপিএম নেতা শুভ্রালোক দাস দাবি করেছেন, দিনহাটা কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ দুই গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে গিয়েছে। তারা প্রচারের লাইমলাইটে আসার জন্যই এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। যদিও অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের স্থানীয় নেতা আমির আলম। তিনি বলেন, ‘ওরা যে দোষারোপ করছে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যে। এসএফআই নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা করে আমাদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।’