দিনহাটা: কখনও সিজার করতে গিয়ে রোগীকে নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করা, তো কখনও অস্ত্রোপচারের সময় সদ্যোজাতের মাথায় আঘাত। বরাবরই দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালের চূড়ান্ত অব্যবস্থার ছবি ধরা পড়েছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই কর্তৃপক্ষ দেখছি-দেখব বলেই সমস্যা কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। যে কারণে সমস্যার সমাধান হয়ে ওঠেনি আজও। রবিবারের ঘটনা তারই প্রমাণ। তার ওপর অভিযোগ, হাসপাতালে কোনও সমস্যা দেখা দিলেই সুপারের দেখা মিলছে না। ফলে তাঁর দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
রবিবার বড় শৌলমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের মদনাকুড়ার গৃহবধূ বিউটি খাতুনের প্রসব করানোর সময় ছুরির আঘাত লেগে সদ্যোজাতের মাথা চিরে যায়। যা নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় হাসপাতালে। এমনকি ওই সদ্যোজাতের পরিবারের তরফে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও তাঁর সহকর্মীদের নামে দিনহাটা থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়। যদিও এই ঘটনার দিন হাসপাতাল সুপারের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ওই সদ্যোজাতর বাড়ির লোকজন। তাঁদের কথায়, ‘দুপুর থেকে এরকম একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলেও ঘটনাস্থলে হাসপাতাল সুপারের দেখা মেলেনি। প্রসূতির আত্মীয় রসিদুল মিয়াঁ বলেন, ‘দুপুর থেকে এই সমস্যার সূত্রপাত। এরপর অভিযোগ জানাতে সুপারের ঘরে গেলে দেখি কেউ নেই, ঘর বন্ধ। পরবর্তীতে জানতে পারি সুপার ছুটিতে আছেন। কিন্তু যিনি দায়িত্বে আছেন, তাঁকেও ঘটনাস্থলে আসতে দেখা যায়নি।’ একটি হাসপাতালে সুপারের মতো অভিভাবক যদি উপস্থিত না থাকেন, তাহলে সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অব্যবস্থা তৈরি হবে এটাই স্বাভাবিক।
বাইরে থাকার বিষয়ে সুপার রণজিৎ মণ্ডল ফোনে বলেন, ‘সরকারি নিয়ম মেনে বেশ কিছু ছুটি বরাদ্দ থাকে। সেই ছুটিতেই আমি বাইরে আছি। তাছাড়া বরাদ্দ ছুটি থেকে অনেক কম ছুটি নিই আমি এবং ছুটি নিলেও সেই জায়গায় দায়িত্বে কেউ না কেউ থাকেন।’ তবে তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট ঘটনার বিষয়ে তিনি খোঁজখবর রাখছেন। সোমবার রাতেই তাঁর দিনহাটা ঢোকার কথা। এরপর সব বিষয় খতিয়ে দেখে কমিটি গঠন করে তদন্ত করা হবে।
উল্লেখ্য, হাসপাতাল সুপারের অনুপস্থিতি নিয়ে এর আগে খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহও সরব হয়েছিলেন। সুপার বারবার এত ছুটি কী করে পান, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। এরপর পরিস্থিতি সামান্য বদলালেও রবিবারের ঘটনার দিন সুপারের অনুপস্থিতি নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এদিকে, সুপার বর্তমানে একজন স্বাস্থ্য আধিকারিক, ফলে তাঁর দায়িত্ব অনেকটাই বেড়েছে। তাই জবাবদিহিও রয়েছে।
রবিবারের ঘটনায় চিকিৎসক মহলেও ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে। সদ্যোজাতর বাবা সালাম মিয়াঁ বলেন, ‘প্রথমে চিকিৎসকরা দুটি সেলাইয়ের কথা বললেও এখন যেটা জানতে পারছি সন্তানের মাথায় দশটিরও বেশি সেলাই পড়েছে। ফলে আগামীতে সন্তান কতটা সুস্থ থাকবে, তা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছি।’