Dinhata | ব্রহ্মাণীরচৌকির আঁধারে হারানো পথ

Dinhata | ব্রহ্মাণীরচৌকির আঁধারে হারানো পথ

ব্লগ/BLOG
Spread the love


দিনহাটা: দিনহাটা-১ ব্লকের ভেটাগুড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্রহ্মাণীরচৌকি গ্রাম থেকে মহাকালধাম পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার রাস্তা খানাখন্দে ভরা। এই পথ বর্ষায় কাদা আর শীতকালে ধুলোয় ঢেকে যায়। কোনও অসুস্থ রোগী বা প্রসূতি মাকে এই রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রায় যুদ্ধজয়ের সমান। টোটো দুর্ঘটনা, বাইক উলটে যাওয়া এই রাস্তায় নিত্যদিনের ঘটনা। ক্ষমতার মসনদ পালটালেও এই রাস্তার অবস্থা পালটায় না। শেষ কবে এই রাস্তা সারাই হয়েছিল, পুরস্কার দিলেও বোধহয় কেউ বলতে পারবে না। শুধু যে রাস্তার অবস্থা সঙ্গিন তা নয়, আসল সমস্যার শুরু সূর্য ডোবার পর। ওই ৫ কিলোমিটার রাস্তায় পথবাতির সংখ্যা শূন্য। ফলে সন্ধে হলেই নিরবচ্ছিন্ন অন্ধকারে ডুবে যায় এই পথ। এলাকার মানুষ বেরোতে ভয় পান বাড়ি থেকে। চুরি, ডাকাতির আতঙ্ক তো আছেই, তাছাড়া কয়েক বছর আগে রাতের অন্ধকারে এক ব্যক্তিকে খুন করে ফেলে দেওয়া হয়েছিল এই রাস্তায়। সেই স্মৃতি এখনও টাটকা এলাকাবাসীর মনে। ভয় এত গভীর যে, এলাকার অনেক বাবা-মা তাঁদের ছেলেমেয়েকে ওই রাস্তা দিয়ে টিউশন পর্যন্ত পড়তে যেতে দেন না। কলেজ পড়ুয়া হিমানি বর্মন বলেন, ‘বাবা-মা আমাকে ওই রাস্তা দিয়ে একা যেতে দিতে ভয় পান।’ গলায় একরাশ আক্ষেপ নিয়ে তিনি যোগ করেন, ‘এই কারণে সন্ধের পর আমার টিউশন পড়তে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’ এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পঞ্চায়েতের প্রধান প্রিয়াংকা দে সরকার বলেন, ‘এই রাস্তা ঠিক করতে কয়েক কোটি টাকা প্রয়োজন। বিভিন্ন দপ্তরে আমরা আবেদন করেছি। আশা করি পুজোর পর রাস্তার কাজে হাত দিতে পারব।’

এই গ্রামে একসময় কোচবিহার রাজবংশের লোকেরা বসবাস করতেন বলে শোনা যায়। এখনও এই গ্রামের আনাচে-কানাচে অতীতের স্মৃতি খুঁজে পাওয়া যায়। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা শ্রীমন্ত রায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘বাপঠাকুরদার মুখে শুনেছি একসময় এই পথ দিয়ে রাজার পালকি যেত, আর এখন এই রাস্তায় সন্ধের পর হাঁটতেও ভয় লাগে।’

এই গ্রামে প্রায় ৫ হাজার মানুষের বাস। কিন্তু সন্ধের পর এই গ্রামে এলে মনে হয় গল্পের বইয়ের ভূতের গ্রামে এসে পড়া গিয়েছে। বধূ বাসন্তী রায় বলেন, ‘সন্ধে হলেই যে যার ঘরে ঢুকে যাই। অন্ধকারে বাইরে কী হচ্ছে খোঁজ নিতেও ভয় লাগে।’

অতীত গৌরবের ছায়া আর বর্তমান অবহেলার কষ্ট বুকে নিয়ে এই গ্রামের বাসিন্দারা আজও আশা করেন, একদিন তাঁদের গ্রামের রাস্তা ঠিক হবে, আলো জ্বলে উঠবে। কথিত আছে একবার বিশ্বকর্মা রাজার অনুরোধে একরাতে সাত সাগরদিঘির পাড় তৈরি করে দিয়েছিলেন। বিশ্বকর্মা স্বয়ং মর্ত্যে না নামলে এই রাস্তা ঠিক হবে কিনা এই প্রশ্ন থেকেই যায়।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *