দিনহাটা: দলের স্লোগানই তো রয়েছে ‘খেলা হবে’। আর দিনহাটায় কার্যত ফাঁকা মাঠে খেলে যাচ্ছেন উদয়ন গুহরা। সংবাদমাধ্যমে গরমাগরম বুলি আউড়ে আবার রীতিমতো গোলও দিচ্ছেন। বিরোধীদের দেখাই মিলছে না। আন্দোলন দূর অস্ত, কেবল সংবাদমাধ্যমে আন্দোলনের হুমকি দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছেন তাঁরা।
গত কয়েকমাসে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে শাসকদল পরিচালিত দিনহাটা পুরসভার বিরুদ্ধে। মাস কয়েক আগেই বিল্ডিং প্ল্যান জালিয়াতি কাণ্ডে পুলিশি তদন্তে উঠে আসে তৃণমূল নেতাদের জড়িত থাকার বিষয়টি। অপরদিকে, আবাস যোজনায় ঘরের টাকা নেওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে মামলা গড়িয়েছে হাইকোর্ট পর্যন্ত। পুরসভা নিয়ে বিরোধীদের কাছে গরম গরম ইস্যু থাকার পরেও আন্দোলন তো দূরের কথা, গত কয়েকমাসে একটি ডেপুটেশন পর্যন্ত দিতে দেখা যায়নি বিরোধীদের। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে বিরোধীদের ভূমিকা নিয়ে। তাহলে কি দিনহাটাতে উদয়নকে ছাড় দিচ্ছেন বিরোধী নেতারা? নাকি সংগঠনের শক্তি নেই বলে রাস্তায় নামতে পারছেন না? বিভিন্ন সভায় যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে পথে নামার গরম গরম ভাষণ দিচ্ছেন বিরোধীরা। অথচ সেই বিষয়গুলিকে সামনে রেখে আন্দোলন করতে দেখা যাচ্ছে না বিরোধীদের।
মাঝখান থেকে তৃণমূলের পোয়াবারো। তারাই এখন শাসক ও ‘প্রতিবাদী’ বিরোধী দলের ভূমিকায়। কয়েকমাস আগে জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে ভূমি সংস্কার দপ্তরে গিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা গিয়েছে শাসকদলের মন্ত্রী উদয়নকেই। অথচ প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির এই ইস্যু নিয়ে সরব হওয়ার কথা তো ছিল বিরোধীদের। একের পর এক ঘটনায় যখন শাসকদল থানা ঘেরাও করছে, তখন বিরোধীরা সাংবাদিক বৈঠক করেই দায় সারছে।
ঘাসফুল শিবির তো এই অভিযোগ আবার গর্ব করে মেনেও নিচ্ছে। তৃণমূলের শহর ব্লক সভাপতি বিশু ধরের কথায়, ‘আসলে সাধারণ মানুষ সকলেই এখন তৃণমূলের উন্নয়নের ও সংস্কারের সমর্থক। তাই বিরোধী দল বলে আদতে কিছুই নেই। সেক্ষেত্রে আমাদেরই সংস্কারের ভূমিকায় নামতে হয় কখনো-কখনো। তা সে থানা ঘেরাও হোক বা ভূমি সংস্কার দপ্তরে বিক্ষোভ প্রদর্শন। আমরা বরাবরই সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছি।’
যদিও শাসকদলের এই তত্ত্ব মানতে নারাজ বিরোধীরা। তাদের কথায়, শাসকদল যদি যথার্থ উন্নয়ন করতই তাহলে পুরভোটে বিরোধীদের মনোনয়নপত্র তুলতে এভাবে চাপ দিতে হত না। যার ফলস্বরূপ শহরে প্রথমবার বিরোধীশূন্য পুরবোর্ড দেখেছেন দিনহাটার বাসিন্দারা। সিপিএম জেলা কমিটির সদস্য শুভ্রালোক দাসের কথায়, ‘পথে নামলেই বিরোধীদের বাড়িতে হামলা হচ্ছে, কোথাও কোথাও তাঁদের জীবিকার ওপর কোপ নেমে আসছে। তাহলে বিরোধিতা করার অবকাশ থাকল কোথায়?’
এ তো গেল অপেক্ষাকৃত দুর্বল বামেদের কথা। কোচবিহারে তো সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার কথা বিজেপির। পুরসভায় দুর্নীতির ইস্যুতে পথে নামছেন নাকি আপনারা? এ প্রশ্নের উত্তরে বিজেপির জেলা কমিটির সম্পাদক অজয় রায়ের বক্তব্য, ‘দল যেভাবে নির্দেশ দেবে, সেভাবেই তাদের কর্মসূচি করতে হয়। দলের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা তো আর কিছু করতে পারি না।’
আর তাতেই প্রশ্ন উঠছে দল কবে তাদের নির্দেশ দেবে? আসন্ন বিধানসভা ভোট চলে যাবার পর। উল্লেখ্য, শাসকদল যখন প্রচারে, মিছিল-মিটিংয়ে ঝড় তুলছে তখন বিরোধীদের সেভাবে দেখাই মিলছে না। উপরন্তু পুরসভার বিল্ডিং প্ল্যান পাশ জালিয়াতি কাণ্ডে যখন পুরসভার চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ পর্যন্ত করতে হয়। যা বিরোধীদের কাছে বড় ইস্যু হতে পারত অথচ তখন দেখা যাচ্ছে তারা নির্বাক দর্শকের ভূমিকা ছাড়া অন্য কোনও ভূমিকা পালন করছে না। আবার বিজেপি থেকে বাম উভয়কেই দেখা যাচ্ছে মহকুমার বাইরে এ নিয়ে সরব হচ্ছে। অথচ দিনহাটার রাজপথে প্রতিবাদ মিছিল করে কিংবা পুরসভা ঘেরাও অভিযান করে সহজেই যেখানে সাধারণ মানুষের সমর্থন আদায় করা যেত সেক্ষেত্রে সেই সুযোগ যেন একেবারেই হাতছাড়া করল বিরোধীরা। এমনকি আবাস যোজনার টাকা আদায়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকেও বিরোধীরা যেন হেলায় দূরে সরিয়ে রাখল। আর তাতেই রাজনৈতিক মহল মনে করছে এবারের দিনহাটা বিধানসভা ভোটের লড়াইয়ে কার্যত বিরোধীরা অনেকটাই পিছিয়ে শাসকদলের তুলনায়। আশ্চর্য রাজনীতি