দিনহাটা: কাঁঠাল চিংড়ি হোক বা মেটে কাঁঠাল কষা, এই সময়ে জিভে জল আনা একটি পদের মধ্যে অন্যতম। তেমনি মোচার ঘণ্ট হোক বা মোচার বড়া বাঙালির রসনা বিলাসের পাতে এদের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু নতুন প্রজন্মের গৃহবধূদের অনেকেই এঁচোড় বা মোচা কাটতে জানেন না। আর তাই বর্তমান শপিং মলগুলিতে এঁচোড় কেটে ধুয়ে একেবারে হলুদ মাখানো অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রান্তিক দিনহাটাতে অতটা না হলেও বাজারেই এঁচোড় কেটে বিক্রি হচ্ছে। তাতে কেজিতে হয়তো কখনও দশ টাকা করে বেশি গুনতে হচ্ছে। তবে এঁচোড়ের আঠার আর মোচার মতো সূক্ষ্ম জিনিস বাছা থেকে রেহাই পেয়েছেন বাড়ির গৃহিণীরা।
চওড়াহাট বাজারে এঁচোড় নিতে এসেছিলেন সঞ্জয় দাস। তাঁর কথায়, ‘বাড়িতে এখন গিন্নিদের সময় কোথায়? তাই গোটা নিয়ে গেলে বড় ঝামেলা। অগত্যা কাটিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এমনিতে ৪০-৫০ টাকা কেজি, কাটিয়ে নিলে সেটা কিছুটা বেড়ে যায়।’ তবে শুধু এঁচোড় নয়, ক্রেতাদের সুবিধার্থে কখনও মোচাও কেটে বেছে দেন সবজি বিক্রেতারা। মাছ কাটুনির মতো এ যেন সবজি কাটুনি।
চওড়হাট বাজারের সবজি ব্যবসায়ী শ্রীদাম দেবনাথ রায়ের কথায়, ‘অনেক ক্ষেত্রেই আঠার ভয়ে গৃহিণীরা এড়িয়ে চলেন এঁচোড়। তাই ক্রেতাদের সুবিধার্থে কেটে দেওয়া হয়। কখনও গোটা এঁচোড় না নিয়ে অনেকেই ভাগ করে নেন। এক্ষেত্রে যার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই ওজন করে দেওয়া হচ্ছে। একইরকমভাবে যদি কেউ মোচা ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে চান তারও সুবিধে আছে।’
শহরের প্রবীণা মঞ্জু সাহা মনে করেন, ‘এঁচোড় ছাড়ানোয় একটা শিল্পীর নিপুণতা রয়েছে। বিশেষ কায়দায় আঠা এড়িয়ে এঁচোড়ের কাঁটাযুক্ত শক্ত খোলসের ভেতর থেকে এঁচোড়ের শাঁস, বীজ বের করে আনা সত্যিই দক্ষতার প্রকাশ। সেই সঙ্গে ধৈর্য বড় প্রয়োজন। যা নবীন প্রজন্মের গৃহিণীদের মধ্য কোথায়। তাদের কাছে হেঁশেল তো এখন মোবাইলবন্দি। যাতে কী পদ রান্না হবে তার সমাধান থাকলেও এঁচোড় ও মোচার মতো সবজির সঙ্গে কীভাবে পেরে উঠতে হবে তার উপায় জানা নেই। আর সে কারণেই বাজারে সবজি বিক্রেতাদের ওপর ভরসা বাড়ছে ক্রমে।’
গৃহবধূ সঞ্জু ভৌমিকের কথায়, ‘এঁচোড়ের আঠা বড় সমস্যা। কাটতে গিয়ে হাতের থেকে তা বাসনপত্রে লেগে যাওয়ার ফলে বিরক্তি বাড়ে। তাই সেক্ষেত্রে অন্যান্য সবজির চাইতে এঁচোড় কাটা এড়িয়ে যেতেই পছন্দ করি। তবে সেক্ষেত্রে শাশুড়িমা এগিয়ে আসেন নয়তো বাজার থেকেই কাটিয়ে নিয়ে আসতে বলি।’