প্রসেনজিৎ সাহা, দিনহাটা: দিনহাটার (Dinhata) সীমান্ত কি তাহলে অনুপ্রবেশের ‘সেফ’ করিডর হয়ে উঠেছে। গত সাতদিনে দিনহাটা পুলিশের হাতে ৪৪ জন বাংলাদেশি গ্রেপ্তারের পর সেই প্রশ্নই এখন বড় আকারে দেখা দিয়েছে পুলিশ প্রশাসনের কাছে। ভৌগোলিক দিক থেকে দেখলে দিনহাটার তিন দিকেই রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত। দিনহাটা গিতালদহ-১, গিতালদহ-২ থেকে দিনহাটা-২ ব্লকের সাহেবগঞ্জ এবং সিতাই বেশ কিছু অংশ জুড়ে রয়েছে কাঁটাতার ঘেরা সীমান্ত। তবে গিতালদহের-২ এর পঞ্চধ্বজি, দরিবস ও জারিধরলার প্রায় ৭-৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা একেবারে উন্মুক্ত। তেমনি সিতাইয়ের বেশ খানিকটা অংশও উন্মুক্ত। এর ফলে ওই উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ থেকে শুরু করে পাচার নানা ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। দিনহাটা-২ ব্লকের সাহেবগঞ্জের একেবারে রাজ্য সড়কের ধারেই রয়েছে সীমান্ত। কোথাও সেই সীমান্ত উঁচু কোথাও আবার নীচু। এর ফলে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা যেন স্বাভাবিক। আর তাতেই প্রশ্ন উঠছে এই সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে দালালচক্রের মাধ্যমে অনুপ্রবেশ ঘটছে অহরহ। কোথাও কি যারা গোরু পাচার করছে তারাই আবার মানব পাচার করছে না তো? সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। দিনহাটা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক ধীমান মিত্র বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় টহলদারি আছে বলেই তো ধরা পড়ছে। তবে তাদের সঙ্গে দালালচক্রের যোগাযোগ রয়েছে কি না তা বলতে পারব না। তবে যাদের ধরা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের বাড়ি দিনহাটা সীমান্ত লাগোয়া বাংলাদেশের গ্রামে। সেকারণেই তারা ওই পথ দিয়ে ফিরতে মরিয়া ছিল।’
গত ৩০ মে দিনহাটা স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে ২৮ জন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে দিনহাটা থানার পুলিশ। যারা দিনহাটার সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল। কেউ ২০ বছর আগে তো কেউ আবার ১২ বছর আগে এসে দিল্লি, হরিয়ানার ইটভাটায় কাজ করছিল। পুলিশের ধরপাকড় শুরু হতেই তারা দেশে ফিরতে চায়। গত ২ জুন ফলিমারি স্টেশন থেকে ১৬ জন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ জানতে পারে দিনহাটার সীমান্ত লাগোয়া বাংলাদেশের গ্রামেই তাদের বাড়ি। তাদের অনুপ্রবেশ নিয়ে এক্ষেত্রে বিএসএফ থেকে পুলিশ প্রশাসন সকলের ভূমিকায় উঠছে প্রশ্ন।
যদিও বরাবরের মতোই এবিষয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ বিএসএফের কোর্টেই বল ঠেলেছেন। উদয়নের কথায়, ‘দিনহাটা-১ ব্লকের গিতালদহ-২ কিছুটা এলাকা ছাড়া দিনহাটা-২ ব্লকের সর্বত্রই ফেন্সিং রয়েছে। তাহলে যদি অনুপ্রবেশ ঘটেই থাকে তাহলে তার দায় কার? কোনও দালালচক্র যদি করেও থাকে তার সঙ্গে বিএসএফের মদত রয়েছে। না হলে যেদিক দিয়ে একটা বিড়াল যেতে পারবে না সেদিক দিয়ে মানুষ কী করে ঢুকবে?’ উদয়নের দাবি, সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ যতটা না স্বচ্ছন্দ, পুলিশ ততটা নয়, তাই অনুপ্রবেশ রুখতে বিএসএফকে সক্রিয় হতে হবে।
যদিও বিএসএফের এক আধিকারিক বলেন, ‘বিষয়টি দিনহাটা থানার অধীন, তারা নিশ্চয় বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। তবে কেউ গ্রেপ্তার হওয়ার পর কিছু বলতেই পারে, তাতে সবটা প্রমাণ হয় না। আমরাও বিষয়টি সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত নই, খোঁজ নিয়ে দেখেই তবে এবিষয়ে কিছু বলা যাবে।’
ফেন্সিং না থাকায় সাময়িক সমস্যার কথা শিকার করেছেন গিতালদহ-২ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান আনোয়ারা বিবি। তাঁর কথায়, ‘পঞ্চধ্বজি থেকে জারিধরলার লোহারপুল পর্যন্ত সীমান্ত উন্মুক্ত। তাতে একটা আতঙ্ক তো কাজ করেই।’