সপ্তর্ষি সরকার, ধূপগুড়ি: বিড়াল যেভাবে জাদুবলে রুমাল হয়ে যায়, অনেকটা সেরকমই কোনও অজানা ম্যাজিকে একসময়ের সুসজ্জিত শিশু উদ্যান আজ এলাকার আবর্জনা ফেলার মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। অথচ আশ্চর্যজনকভাবে এনিয়ে স্থানীয়দের যেমন কোনও হেলদোল নেই, তেমনি পুরসভারও মাথাব্যথা নেই। পুর এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সূর্য সেন কলোনি এলাকায় এভাবেই বছরের পর বছর পড়ে রয়েছে অতীতের শিশু উদ্যান।
প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে তৎকালীন ধূপগুড়ি (Dhupguri) পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে স্লিপার, দোলনার মতো শিশুদের মনোরঞ্জনকারী একাধিক সরঞ্জাম সহ চালু হয়েছিল এই একফালি শিশু উদ্যান৷ যেখানে এলাকার তো বটেই, বাইরের খুদেরাও নিয়মিত যাতায়াত করত। কিন্তু তারপরেও যারা এটা তৈরি করেছিল তারাই বেশিদিন এখানে নজরদারি চালায়নি। পুরসভা হওয়ার পর সেই সুযোগ থাকলেও অজানা কারণে আড়াই দশকে সে কাজে উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি কোনও পুর বোর্ডকেই। স্থানীয় অমিত মিত্রের কথায়, ‘মাঝেমধ্যেই শুনি ধূপগুড়ি শহরে পুরসভার হাতে জায়গার অভাব। অথচ এখানে সরকারি জায়গা অযত্নে, অবহেলায় পড়ে রয়েছে। শিশু উদ্যানের পুনরুজ্জীবন না হোক, পুরসভা চাইলে নিশ্চিতভাবে এখানে অন্য কিছু তো গড়ে তুলতেই পারত।’
শহরে দীর্ঘদিনের দাবি ‘আই লাভ ধূপগুড়ি স্মারক’ বসানোর৷ একসময় এসজেডিএ’র উদ্যোগে সেজন্য জোরদার খোঁজখবরও শুরু হয়। তারপর জায়গার অভাবকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে সে কাজ আর এগোয়নি। একইভাবে ভাষা শহিদ স্মারক, ক্লক টাওয়ার, পূর্ণাবয়ব মূর্তি সহ কবিগুরু প্রাঙ্গণ, জাতীয় পতাকা তোলার বেদির মতো নানা স্মারক গড়ে তোলার কথা শোনা গেলেও প্রতিবারই বাধা হয়েছে জায়গার অভাবে। মজার বিষয় একদিকে যখন পুরসভা জায়গা খুঁজে পায়নি, অন্যদিকে তখন সূর্য সেন কলোনিতে পড়ে থাকা জায়গা পুরসভার চোখেই পড়েনি। এলাকার বাসিন্দা মিঠুন চক্রবর্তীর কথায়, ‘বেশ অনেকটা জায়গা পরিত্যক্ত এবং বিনা ব্যবহারে পড়েই আছে। ভালো কিছু গড়ে তোলা গেলে সেটা এলাকার পাশাপাশি গোটা শহরের জন্যেই ভালো হবে।’
এখন ওই পার্কটির জায়গায় জায়গায় আবর্জনার স্তূপ, সীমানা প্রাচীর সহ উদ্যানের বেশিরভাগ জিনিস ভেঙে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও শিশুদের এক-দুটি খেলনার ধ্বংসাবশেষ আজও সেখানে দাঁড়িয়ে। সকলের আশঙ্কা এভাবে পড়ে থাকলে আগামীদিনে জবরদখলও হয়ে যেতে পারে এই দুই ফালি ফাঁকা জায়গা। অবহেলিত পার্কের পুনরুজ্জীবন নিয়ে ধূপগুড়ি পুর প্রশাসক বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান রাজেশকুমার সিং বলেন, ‘এনিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও প্রস্তাব কোনওদিন পাইনি। তবে যতটা জায়গা আছে সেখানে ভালো কিছু গড়ে তোলা যায় এ কথা সত্যি৷ এটা নিয়ে আগামীদিনে অবশ্যই ইতিবাচক ভাবনা নেব আমরা।’
আর পদক্ষেপের আশাতেই তিরিশ বছরের বেশি সময় পড়ে আছে শিশু উদ্যানটি। যাদের ছোটবেলার স্মৃতিতে ওই উদ্যানের ছোঁয়া রয়েছে তাঁরা মনেপ্রাণে চান এই উদ্যানটি যাতে আবার আগের মতো বাঁচিয়ে তোলা হয়। না হলে অনেকেরই জীবন থেকে একটুকরো ছেলেবেলা কার্যত হারিয়ে যাবে।