সপ্তর্ষি সরকার, ধূপগুড়ি: ক্ষুদ্র ঋণদান সংস্থা থেকে নেওয়া ঋণ সুদ সহ পরিশোধের পরেও আইনি নোটিশ পেয়ে দিশেহারা গ্রাহকরা। ধূপগুড়ি শহরের (Dhupguri) সংহতিনগর এলাকায় চেন্নাইভিত্তিক ওই ক্ষুদ্র ঋণদান সংস্থার ধূপগুড়ি শাখার অফিস। শুক্রবার বিকেলে সেখানে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ সংস্থার প্রাক্তন আধিকারিক, দিনহাটার বাসিন্দা মিঠুন মজুমদার গ্রাহকদের থেকে টাকা নেওয়ার পর জাল রসিদ এবং ঋণ পরিশোধের সার্টিফিকেট দিয়েছেন। সংস্থায় সেই টাকা জমা করেননি। সংস্থার আধিকারিকরা জানান, বেশিরভাগ কিস্তিই জমা হয়নি। বকেয়া ঋণের দাবিতে গ্রাহকদের আইনি নোটিশ পাঠানো হলে সকলে অফিসে এসে জানতে পারেন যে শতাধিক গ্রাহকের লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে সংস্থার মিঠুন চম্পট দিয়েছেন। প্রতারিত গ্রাহকদের একাংশ বিক্ষোভ দেখাতে অফিসে হাজির হন। ফের একবার বকেয়া পরিশোধ করার কথা উঠতেই তাঁরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ওই ঘটনার জেরে এদিন ধূপগুড়ি থানার পুলিশও সংস্থার অফিসে যায়।
গ্রাহকদের সম্মিলিত বিক্ষোভে সদ্য কাজে যোগ দেওয়া সংস্থার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার প্রসেনজিৎ সরকার নিজেই ভয় পেয়ে যান। তাঁর কথায়, ‘প্রাক্তন ওই আধিকারিকের বিরুদ্ধে সংস্থার তরফে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে। হেড অফিসেও সমস্ত বিষয়টি জানানো হয়েছে। এদিন অডিট অফিসার এসেছিলেন। অভ্যন্তরীণ অডিট সম্পূর্ণ হলেই গ্রাহকদের সমস্যা মিটে যাবে।’ সংস্থার কর্মীরাও জানান, প্রাক্তন আধিকারিক গ্রাহকদের প্রতারিত করায় ব্যবসা নিয়ে তাঁরাও বিপদে পড়েছেন।
অন্যদিকে, এদিনের ঘটনার পর পাড়ায় পাড়ায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ক্ষুদ্র ঋণদান সংস্থার অফিস এবং তাদের কারবার নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠল। এত অনিয়ম করেও ওই সংস্থা কীভাবে শহরে অফিস খুলে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে ধূপগুড়ি পুর প্রশাসক বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান রাজেশকুমার সিংও সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্স বিভাগকে বলব যাতে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হয়। যে বিল্ডিংয়ে সংস্থার অফিস চলছিল সেটা কমার্সিয়াল কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে। নিরপরাধ সাধারণ মানুষ যেন কোনওভাবেই সমস্যায় না পড়েন তা সুনিশ্চিত করা হবে।’
এদিকে, দ্রুত সমস্যা না মিটলে গ্রাহকদের তরফে বড় জমায়েত করে সংস্থার অফিসে বিক্ষোভ দেখানোর হুমকি দেওয়া হয়। ওই ক্ষুদ্র ঋণদান সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন মাগুরমারি-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যা সংগীতা দাস রায়। তিনি বলেন, ‘গত বছর আমি ৪০ হাজার টাকার ঋণ পরিশোধ করেছিলাম। ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের সই সিল করা সার্টিফিকেটও নিয়ে গিয়েছি। আইনি নোটিশ না পেলে জানতেই পারতাম না যে সংস্থার খাতায় আমার নামে এখনও নয় হাজার টাকার বেশি বাকি পড়ে রয়েছে। তবে আমরা সংস্থাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি ফের টাকা দেওয়ার প্রশ্নই নেই। তাদের আইনি সমস্যাও তাদের নিজেদেরই মেটাতে হবে।’
একইভাবে ৪০ হাজারের ঋণ নিয়ে সাঁকোয়াঝোরা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা রিনা পারভিনও বিপদে পড়েছেন। তাঁর কথায়, ‘যতদূর জানি সংস্থার এক অফিসার আমাদের মতো ১০০-র বেশি ঋণগ্রহীতার টাকা এইভাবে হাপিস করেছে। আমাদের কাছে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ, সার্টিফিকেট সবই আছে। ফলে নতুন করে কিস্তি দেওয়ার প্রশ্নই নেই।’