রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি : দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শহরে পা রাখার আগেই রবিবার তৃণমূল কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলার (সমতল) প্রতিটি ব্লক কমিটি ঘোষণা করা হল। আর ঘোষণা হতে না হতেই এই কমিটি নিয়ে দলের অন্দরে মান-অভিমানের পালা শুরু হয়েছে।
পূর্ব প্রত্যাশামতোই শিলিগুড়ি পুরনিগম এলাকায় তিনটি শহর ব্লক কমিটি ভেঙে ছয়টি করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও দলের দীর্ঘদিনের নেতা-কর্মীরা সুযোগ না পাওয়ায় হতাশ। আবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না করে শুধুমাত্র কয়েকজন নেতা-নেত্রীকে সাধারণ সম্পাদক ও সম্পাদক পদে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। যা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কমিটি নাপসন্দ হওয়ার প্রভাব এদিন দলের বৈঠকেও পড়েছে। দলনেত্রীকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিতে এদিন জেলা চেয়ারম্যান বৈঠক ডেকেছিলেন। বৈঠকের আগেই রাজ্য থেকে কমিটি ঘোষণা হয়ে যায়। আর তাতে নাম না থাকায় অনেক নেতা-নেত্রীই আর সেই প্রস্তুতি বৈঠকে হাজির হননি।
সামনেই বিধানসভা ভোট। শহর এবং গ্রামের নেতা-নেত্রীদের বিরোধ মাথায় রেখে এখানে দলকে শক্তিশালী করতে সভাপতি পদ তুলে দিয়ে নয় সদস্যের কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে। সঙ্গে জেলা চেয়ারম্যান রয়েছেন। এবার শহর এবং গ্রামে দলের মূল সংগঠন এবং শাখা সংগঠনগুলির ব্লক সভাপতিদের নামও ঘোষণা করা হল। আগে তিনটি কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন পুরনিগমের মেয়র পারিষদরা। এখন শহরে ছয়টি কমিটি বানিয়ে তাঁদের সরিয়ে নতুনদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর আসন্ন বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।
এদিকে, দলের শহর কমিটির সংখ্যা ছয়টি করা হলেও কমিটির নাম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শহর কমিটি ১, ১ এ, ২, ২ এ, ৩, ৩ এ এভাবে নামকরণ না করে ১-৬ এইভাবে নামকরণ করা উচিত ছিল বলে অনেকেই মনে করছেন।
গ্রামের ৭টি ব্লক কমিটিতে চমক বলতে পুরোনো নেতা প্রবীর রায়কে আবার নকশালবাড়ি (১) ব্লক সভাপতির দায়িত্বে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। বাকি ব্লকগুলিতে পুরোনোদেরই রেখে দেওয়া হয়েছে। তবে, আইএনটিটিইউসির খড়িবাড়ি ব্লক সভাপতি পদে হান্দ্রু ওরাওঁকে রেখে দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পানিট্যাঙ্কির জমি কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে টোটো, অটো, ভাড়ার গাড়ি থেকে নিয়মিত তোলাবাজিতে বারবার এই নেতার নাম জড়িয়েছে। পানিট্যাঙ্কির জমি কেলেঙ্কারি থেকে তাঁর আয় হওয়া কোটি কোটি টাকা নেপালের ব্যাংকে গচ্ছিত। এখনও এই নেতার বিরুদ্ধে পানিট্যাঙ্কি এলাকা থেকে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা তোলাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এর আগে সংগঠনের জেলা সভাপতি একাধিকবার এই নেতার বিরুদ্ধে রাজ্যে অভিযোগ করেছিলেন। তারপরেও তাঁকে কেন ব্লকের দায়িত্বে রেখে দেওয়া হল সেই প্রশ্ন তুলছেন নেতা-কর্মীরা। সংগঠনের জেলা সভাপতি নির্জল দে বলেছেন, ‘এই কমিটি রাজ্য থেকে করেছে। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই।’ অর্থাৎ হান্দ্রুকে নিয়ে যে জেলা সভাপতিও সন্তুষ্ট নন, সেটা তাঁর বক্তব্যেই স্পষ্ট।
দলের যুব সংগঠনের নতুন জেলা সভাপতি হিসাবে জয়ব্রত মুখুটি দায়িত্ব পাওয়ার পর গোপাল সাহা এবং রাজু দাস এই দুই নেতা নিজেদের ১ ও ২ ব্লকের সভাপতি হিসাবে দাবি করে ময়দানে নেমে পড়েছিলেন। কিন্তু দল তাঁদের যুব সংগঠনের দায়িত্বে না রেখে দলের শহর কমিটির সহ সভাপতি পদ দিয়েছে। যুব সংগঠনে একমাত্র মহিলা হিসাবে কাউন্সিলার সম্প্রিতা দাসকে দায়িত্বে আনা হয়েছে।
দলের জেলা চেয়ারম্যান সঞ্জয় টিব্রুয়াল বলেছেন, ‘রাজ্য থেকে খুব ভালো কমিটি তৈরি করা হয়েছে। আমরা সবাই মিলে এই জেলায় দল এবং শাখা সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করব।’