রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: ২০১৪ সালে রাজ্য সরকার দার্জিলিং পাহাড়ে লেপচা উন্নয়ন বোর্ড গঠন করে। উদ্দেশ্য ছিল, এই বোর্ডের মাধ্যমে লেপচা জনজাতির বাসিন্দাদের বাড়িঘর তৈরি করা, এলাকার রাস্তাঘাট তৈরি, পানীয় জলের ব্যবস্থা করা। এর পর থেকে ধাপে ধাপে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রাজ্য সরকার পাহাড়ে মোট ১৬টি জনজাতির জন্য উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেছে। প্রতিটি বোর্ডের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জনজাতিগুলির উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাতে কিছু কাজ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বোর্ডগুলির বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে।
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী বার বার পাহাড়ে এসে বোর্ডগুলিকে আর্থিক বরাদ্দ দিয়ে গেলেও ভোটবাক্সে তৃণমূল কংগ্রেস বা তাদের জোটসঙ্গী পার্টি কোনও ফায়দা পায়নি। বরং বিজেপিই বিভিন্ন ভোটে পাহাড়ে এগিয়ে থেকেছে। এই জায়গা থেকে একটা সময় পাহাড়ের বোর্ডগুলির সমস্ত বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ের উন্নয়ন বোর্ডগুলির পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বোর্ডগুলির পুনর্গঠন এবং এগুলির ওপরে নজরদারির জন্য গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে (জিটিএ) দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও ছ’মাস কেটে গিয়েছে। এখনও বোর্ড পুনর্গঠন করতে পারেনি জিটিএ। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, বোর্ড পুনর্গঠন নিয়ে প্রতিটি জনজাতির মধ্যেই বিরোধ তৈরি হয়েছে। কমিটিতে কে আসবেন, কে বাদ যাবেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। আর এর জেরেই সবকিছু থমকে রয়েছে। জিটিএ’র চিফ এগজিকিউটিভ অনীত থাপা বোর্ড পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন। তবে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব না মেটা পর্যন্ত বোর্ডগুলি নিয়ে রাজ্য এগতে চায় না। এই পরিস্থিতিতে পাহাড়ে বিভিন্ন জনজাতির উন্নয়ন থমকে রয়েছে, যা বোর্ডগুলি স্বীকার করে নিয়েছে। আর্থিক বরাদ্দ না আসায় একাধিক বোর্ড অফিস চালাতেই হিমসিম খাচ্ছে।
গত বছরের নভেম্বর মাসে মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিংয়ে এসে জিটিএ এবং ১৬টি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী অনীত থাপাকে বোর্ডগুলির ওপরে নজরদারির জন্য দায়িত্ব দেন। পাশাপাশি প্রতিটি বোর্ড পুনর্গঠনের নির্দেশও তিনি দিয়েছিলেন। জনজাতিগুলির সঙ্গে কথা বলে অনীত থাপা প্রতিটি বোর্ডের নতুন কমিটির তালিকা কলকাতায় পাঠাবেন, রাজ্য সেই তালিকা অনুমোদন করবে এমনটাই স্থির হয়েছিল। ওই বৈঠকেই প্রাক্তন আমলা গোপাল লামাকে তামাং উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়ার ঘোষণাও হয়েছিল।
এর পরেই ঝামেলার সূত্রপাত। পুনর্গঠিত বোর্ডের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান কে হবেন, সদস্য কারা থাকবেন সেটা নিয়ে জনজাতিগুলির মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়। একাধিক গোষ্ঠী অনীতের কাছে তাঁদের প্যানেল জমা দেন। দাবি, পালটা দাবির জেরে অনীত এখনও পর্যন্ত কোনও বোর্ডের প্রস্তাবিত তালিকা রাজ্যকে পাঠাননি। মঙ্গর উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নবীন মঙ্গর বলেছেন, ‘আমাদের হাতে কোনও টাকা নেই। অফিস চালাতেও সমস্যা হচ্ছে। বোর্ড নতুনভাবে গঠন করা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন। তার পরে আমরা প্রস্তাবিত বোর্ডের তালিকা জিটিএকে জমা দিয়েছি। কিন্তু এখনও বোর্ড পুনর্গঠন হয়নি।’
২০২০ সালের পরে বোর্ডগুলি উন্নয়ন খাতে কোনও আর্থিক বরাদ্দ পায়নি বলে জানিয়েছে। যার ফলে গত ছয়, সাত বছর ধরে প্রতিটি বোর্ড অফিস সামাল দিতেই নাস্তানাবুদ হচ্ছে। অফিস ভাড়া, সেখানে কর্মীদের মাইনে, বিদ্যুৎ বিল মেটাতে সমস্যা হচ্ছে বলে একাধিক বোর্ড চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।