তমালিকা দে, দার্জিলিং: গাড়িটা রোহিণী ঢুকতেই আবহওয়া বদলাতে শুরু করেছিল। গায়ে চড়াতে হল হালকা গরম পোশাক। এরপর যত ওপরে উঠল চাকা, কুয়াশা তত ঘিরে ধরতে শুরু করল চারদিক থেকে। হোলির ছুটিতে অনেকেই সপরিবারে সকাল সকাল রওনা দিয়েছিলেন শৈলশহরের উদ্দেশ্যে। কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন ছাড়া দার্জিলিং (Darjeeling) যাত্রা অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। শনিবার পর্যটকদের নিরাশ হতে হল আবহাওয়ার কারণে। ঘন কুয়াশার চাদরে মুড়ি দিয়ে বুদ্ধ ঘুমোলেন দিনভর।
ছুটি কাটানোর অভিজ্ঞতা অবশ্য সুখকর ছিল না সকলের কাছে। সৌজন্যে, ট্রাফিক জ্যাম। ঘুম পর্যন্ত পরিস্থিতি ঠিকঠাক ছিল। তারপর থেকে গাড়ির চাকা থমকাতে শুরু করল কিছুক্ষণ বাদে বাদে। ঘুম থেকে দার্জিলিং শহরে পৌঁছাতে লেগে গেল একঘণ্টারও বেশি সময়।
মাধ্যমিক শেষে একদল পাহাড়ে ছুটি কাটাচ্ছে, উচ্চমাধ্যমিক শেষে যাবে আরেকদল। দেশ ও বিদেশের নানা প্রান্তের পর্যটক তো রয়েছেনই। তাছাড়া হোলিতে প্রতিবার ‘ফ্লাইং টুরিস্ট’-দের ভিড় হয় শৈলশহরে। তবে, এদিনের ছবিটা কল্পনা করতে পারেননি খোদ স্থানীয়রা। দুপুর তিনটে নাগাদ কথা হল সোনাম তামাংয়ের সঙ্গে। ম্যালে চা বিক্রি করেন। ক্রেতাদের সামলাতে সামলাতে বললেন, ‘এত লোক হবে ভাবিনি। নয়তো আরও বেশি পরিমাণে চা বানিয়ে আনতাম। এখনও পর্যন্ত দুশো কাপ বিক্রি করেছি। রবিবার ভিড় আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।’
ম্যালে তখন রীতিমতো মেলা বসেছে। মঞ্চে নেপালি গান ধরেছে স্থানীয় একটি ব্যান্ড। স্থায়ী দোকানের পাশাপাশি অস্থায়ীভাবে কয়েকজন চা, কেক, খেলনা, বেলুন ইত্যাদি বিক্রি করছেন। তাঁদেরই একজন বললেন, ‘সাধারণত ক্রিসমাসের সময় এমন ভিড় দেখা যায়। বিক্রিবাটা ভালোই হচ্ছে।’
এদিন শিলিগুড়ি সহ সমতলের বিভিন্ন জায়গা এবং দার্জিলিংয়ের আশপাশ থেকে প্রচুর মানুষ এসেছিলেন ছুটি কাটাতে। অধিকাংশই সকালে এসে ঘোরা-খাওয়াদাওয়া সেরে সন্ধ্যায় বাড়ির পথ ধরেন। বাকিরা রবি কাটিয়ে ফিরবেন সোমবার সকালে। ভাড়া করে আনা বা ব্যক্তিগত গাড়ি রাখার জায়গা হিসেবে বহু পর্যটক বেছে নিয়েছেন সড়কের ধার। তাতেই ট্রাফিক জ্যাম আর ভোগান্তি। মহাকালে পার্কিং জোনে গাড়ি রাখতে গেলে ঘণ্টাপ্রতি খরচ ২০ টাকা। সময় সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা। অভিযোগ, তারপর কেউ গাড়ি রাখতে চাইলে ‘সারারাত জেগে পাহারা’র অজুহাতে ঘণ্টাপ্রতি ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাওয়া হয়েছে।
ভিড়ে কড়া নজর রাখছে পুলিশ-প্রশাসন। ম্যালের আশপাশে প্রায় সবক’টি হোটেল বুকড। কয়েকটিতে ‘হাউসফুল’ বোর্ড পর্যন্ত টাঙানো হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে দর বাড়াচ্ছে দূরের হোটেলগুলো। হোটেল মালিকরা খোলাখুলি তা স্বীকার করেছেন। বলছেন, ‘হাতেগোনা কিছু ঘর ফাঁকা। তাই দাম বাড়ছে।’ পাহাড়মুখী পর্যটকদের ঢলে চওড়া হাসি ব্যবসায়ীদের মুখে।
আলিপুরদুয়ার থেকে পরিবার নিয়ে এদিন দার্জিলিংয়ে আসেন অমিত মজুমদার। পেশায় স্কুল শিক্ষক অমিতের অভিজ্ঞতা, ‘বারোটার সময় এখানে পৌঁছে হোটেল খুঁজতে দু’ঘণ্টারও বেশি সময় চলে গেল।’ একই অবস্থা কলকাতার গড়িয়াহাটের বাসিন্দা অঙ্কিতা সরকারের। বাড়তি টাকা খরচ করেও মনমতো হোটেল পাননি তিনি।
কোথাও কোনও অভিযোগ উঠলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে পুলিশ। জিটিএ জনসংযোগ আধিকারিক এসপি শর্মাও জানালেন, পর্যটকদের যাতে অসুবিধায় পড়তে না হয়, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।