উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: দলাই লামার উত্তরসূরি ইস্যুতে এবার তরজায় জড়াল ভারত-চিন। সম্প্রতি নিজের উত্তরসূরি বেছে নেওয়ার বিষয়ে সবুজ সংকেত দেন তিব্বতি ধর্মগুরু চতুর্দশ দলাই লামা। কে হবে পঞ্চদশ দলাই লামা তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। এক ভিডিও বার্তায় দলাই লামা জানান একমাত্র গাদেন ফোদ্রাং ট্রাস্টের সদস্যদের উপরই বর্তাবে। এনিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায় চিন। তারা বলে, পরবর্তী দলাই লামার নির্বাচন একান্তভাবেই বেজিংয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে হতে হবে।
আগামী ৬ জুলাই দলাই লামার ৯০ তম জন্মদিনে এই সংক্রান্ত ঘোষণা হওয়ার কথা। তার আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু জানান, দলাই লামার উত্তরসূরি কে হবেন, তা বাছাইয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান আছে। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সেই প্রতিষ্ঠানই এবং তিব্বতি বৌদ্ধদের নেতা অর্থাৎ, দলাই লামা নিজে। অন্য কারও এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই।
রিজিজুর বক্তব্য সামনে আসতেই ফুঁসে উঠেছে চিন। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ‘১৪তম দলাই লামার চিন-বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রকৃতি সম্পর্কে ভারতের স্পষ্ট ভাবে জানা উচিত এবং জিজাং (তিব্বত) সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে প্রতিশ্রুতি পালন করা উচিত। তিব্বত সম্পর্কিত বিষয়গুলি চিনের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে দাবি করে মাও বলেছেন, ‘জিজাং সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে ভারতের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়’। তিনি আরও জানান, এই বিষয়ে মন্তব্য করা বা কোনো পদক্ষেপ করার ক্ষেত্রে ভারতের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ, চিন-ভারত সম্পর্কের উন্নতি ও উন্নয়নে এর গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। যদিও চিনের বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারতও। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এক বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, ‘ভারত সরকার সব সময় ভারতে বসবাসকারী সকলের ধর্মীয় অধিকার সুরক্ষিত রেখেছে এবং আগামীতেও তা রেখে যাবে। ধর্ম ও বিশ্বাস কেন্দ্রীক রীতিনীতির ক্ষেত্রে কিছু বলার মতো জায়গায় ভারত নেই।’
উল্লেখ্য, দলাই লামা জানিয়েছেন, ‘তিব্বতি বৌদ্ধ ঐতিহ্যের বিভিন্ন প্রধান এবং দালাই লামার বংশের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত ধর্ম রক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে অতীত ঐতিহ্য অনুসারে অনুসন্ধান এবং স্বীকৃতির পদ্ধতিগুলি পরিচালনা করা উচিত। এর মাধ্যমে পুনর্জন্মকে (পরবর্তী দালাই লামার নির্বাচন) স্বীকৃতি দেওয়ার একমাত্র কর্তৃত্ব গাদেন ফোদ্রাং ট্রাস্টের রয়েছে; এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার মতো কোনও কর্তৃত্ব অন্য কারও নেই।’ যদিও চিন জানায়, ‘দলাই লামার উত্তরসূরির পরিচয় অনুমোদন করতে হবে এবং এটি চিনে শতাব্দী প্রাচীন আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে করতে হবে। দলাই লামার উত্তরসূরিকে চিনা আইন ও বিধিবিধানের পাশাপাশি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং ঐতিহাসিক রীতিনীতি মেনে চলতে হবে।’
১৯৫৯ সালে লাসায় চীনা শাসনের বিরুদ্ধে ব্যর্থ বিদ্রোহের পর ভারতে পালিয়ে আসা দালাই লামা হিমাচল প্রদেশের ধরমশালায় আশ্রয় নিয়েছেন। সেখান থেকেই তিনি তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে থাকেন। চিন তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং বিদ্রোহী হিসেবে আখ্যা দিলেও, দলাই লামা অনেকের কাছে অহিংসা, করুণা এবং তাদের পরিচয় রক্ষার জন্য তিব্বতি সংগ্রামের একজন বিশ্বব্যাপী প্রতীক হিসেবে দেখেন। ভারত সরকারও দলাই লামার সঙ্গে যথেষ্টই সুসম্পর্ক রেখে চলে।