নয়ারহাট: রবিবার বিকেল। প্যান্ট গুটিয়ে সাইকেল ঠেলে মরা সুটুঙ্গা নদী পার হচ্ছিলেন জগদীশ বর্মন। ওপারে গিয়ে একরাশ বিরক্তি এবং ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, ‘ভোট আসে, ভোট যায়। রাজনীতির রং বদলায়। কিন্তু নদী পারাপারের যন্ত্রণা ঘোচে না। এই যন্ত্রণা যে আরও কতদিন ভোগ করতে হবে জানা নেই।’ মাথাভাঙ্গা-১ ব্লকের শিকারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়দোলায় এই দুর্ভোগের ছবিটা মাসের পর মাসের। যদিও আশার কথা শুনিয়েছেন স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য শুক্লা রায় বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ‘ওখানে সেতু তৈরির অনুমোদন মিলেছে। অর্থবরাদ্দ হলেই কাজ শুরু হবে।’
বড়দোলা এবং গাদলেরকুঠির অনেক পড়ুয়া শিকারপুর হাইস্কুলে পড়ে। মরা সুটুঙ্গা নদীতে সেতু না থাকায় ঘুরপথে তাদের স্কুলে যেতে হয়। অনেকে ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে সাঁকো পেরিয়ে যাতায়াত করতেন। এখন তো সেই সাঁকোটাও নেই। গত বর্ষায় জলের তোড়ে ভেসে যায় সাঁকোটি। তারপর আর সেটি তৈরি করা হয়নি। প্রতিবছর যদিও সেটাই রীতি ছিল ওই এলাকার। বর্ষায় সাঁকো ভাঙত, তারপর সেটাকে আবার তৈরি করে দেওয়া হত। কিন্তু সেতু তৈরি হয়নি এতবছরেও। স্থানীয় গোলাপচন্দ্র বর্মন বলেন, ‘ফি বছর গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে সাঁকো তৈরি করে দেওয়া হয়। কিন্তু বর্ষায় জলের তোড়ে সাঁকো ভেসে যায়। সমস্যার স্থায়ী সমাধানে নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হলে মানুষ উপকৃত হবেন। দ্রুত সেতু নির্মাণে প্রশাসনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’
দীর্ঘদিন ধরে মরা সুটুঙ্গা নদীর ওপর সেতুর দাবি উঠলেও তা পূরণ না হওয়ায় বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে এলাকাবাসীর। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনিক ঔদাসীন্যে নদী পারাপারের যন্ত্রণা তাঁদের ভবিতব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুখা মরশুমে জলকাদা ভেঙে যাতায়াত চলছে। বর্ষায় ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত বন্ধ থাকে। কারণ মরা সুটুঙ্গা নদীর তখন অন্য রূপ। সেসময় প্রায় তিন কিমি ঘুরে সাধারণ মানুষকে যাতায়াত করতে হয় বলে জানালেন আরেক স্থানীয় অনিল বর্মন।
শিকারপুর বাজার, বিডিও অফিস, বিএলএলআরও অফিস ও প্রেমচাঁদের হাট যাতায়াতের ক্ষেত্রেও বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কৃষিপণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রেও সমস্যার শিকার হতে হয় বলে বক্তব্য রাজকুমার বর্মন, সঞ্জিত অধিকারীর।
তৃণমূলের শিকারপুর অঞ্চল সভাপতি নিত্যজিৎ বর্মন বলেন, ‘ওখানে সেতু তৈরির প্রস্তাব এর আগে প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। আজ না হোক কাল সাড়া মিলবেই।’ তৃণমূল যুব কংগ্রেস নেতা শাহিন আলমও সেতু তৈরির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে বলে আশ্বাস দেন।