কোচবিহার: চলতি শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুলগুলিতে ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে প্রায় তিন মাস হতে চলল। অথচ জেলার এমন প্রচুর স্কুল রয়েছে, যেখানে সকল ছাত্রছাত্রী এখনও বই পায়নি। এর মধ্যে মূলত রয়েছে পঞ্চম ও ষষ্ঠ এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রী। ক্লাস শুরুর তিন মাস পরেও বই না পাওয়ায় যথেষ্ট সমস্যায় পড়েছে তারা। যদিও বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে শুরু করে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ, শিক্ষা দপ্তর সকলেই কার্যত উদাসীন।
কোচবিহার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সমরচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘যেখানে একাদশ ও দ্বাদশের বইয়ের ঘাটতি রয়েছে, সেটা আমরা শিক্ষা দপ্তরে চেয়ে পাঠিয়েছি। তবে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণি বই পায়নি এমন খবর আমাদের কাছে নেই বা আমাদেরকে কেউ জানায়নি।’ পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কোচবিহার জেলা কনভেনার সঞ্জয় সরকার বলেন, ‘আমরা বইয়ের ঘাটতি নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি।’ সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলি এ বিষয়ে অভিযোগ করলে তাঁরা শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কোচবিহার জেলা কনভেনার তথা পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি মানস ভট্টাচার্য।
কোচবিহার জেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক মিলিয়ে সরকারি ও সরকার পোষিত মোট ২৫০টি স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে ৪১টি মাধ্যমিক ও ২০৯টি উচ্চমাধ্যমিক। এছাড়া সরকার পোষিত ২৩টি মাদ্রাসা রয়েছে। সবমিলিয়ে স্কুলগুলিতে দুই লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী রয়েছে। চকচকা হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক দেবদূত দেবনাথ বলেন, ‘আমাদের স্কুলে উচ্চমাধ্যমিকে ৬০ জন পড়ুয়া রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩০ জন বই পেয়েছে। বাকিরা পায়নি। এতে ওরা খুবই সমস্যায় পড়েছে। স্কুলে এসে তারা প্রতিদিনই জিজ্ঞাসা করে কবে বই আসবে।’ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শুচিস্মিতা চক্রবর্তী জানান, তাঁদের স্কুলে একাদশ শ্রেণির ১৫ জন ছাত্রী এখনও বই পায়নি। একইভাবে, দেওয়ানবস উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির ২০ জন বই পায়নি। কাটামারি হাইস্কুলের পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৩০ জনের মতো বই পায়নি।’
ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার সুবিধার কথা মাথায় রেখে সরকারের তরফে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণিতেই বিনামূল্যে বাংলা, ইংরেজি সহ বিভিন্ন পাঠ্যবই দেওয়া হয়। এর মধ্যে নীচু ক্লাসগুলিতে প্রায় সব বই দেওয়া হয়। এই অবস্থায় বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী এখনও বই না পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই সমস্যায় পড়েছে পড়ুয়ারা।
ক্লাস শুরু হওয়ার এতদিন পরেও ছাত্রছাত্রীরা সকলে বই না পাওয়ার বিষয়টি সামনে আসতে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষা মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই রাজ্য সরকার যে উদ্দেশ্যে ছাত্রছাত্রীদের বই দেয়, সেই উদ্দেশ্য কিছুটা হলেও ব্যাহত হচ্ছে। কাদের ভুলে বা উদাসীনতায় এমনটা হচ্ছে, তা নিয়ে শিক্ষামহলে ইতিমধ্যেই জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সরকার বলেন, ‘এতদিন পরেও সকল ছাত্রছাত্রী বই না পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই পঠনপাঠনে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষা দপ্তরের তরফে যদি বাংলার শিক্ষা পোর্টালে থাকা নামের তুলনায় স্কুলগুলিকে ৫ থেকে ১০ শতাংশ বই বেশি দেয়, তাহলে আর এই সমস্যা থাকে না।’