কোচবিহার: পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানগুলিতে মাটির ভাঁড় এখন বেশ জনপ্রিয়। পরিবেশবান্ধব তো বটেই, সেই ভাঁড়ে খাওয়া চায়ের নাকি আলাদা ‘ফ্লেভার’ মেলে। তবে স্বাদে-গুণে যাই হোক না কেন পরিবেশের কথা মাথায় রেখে জেলার প্রত্যেকটি সরকারি দপ্তরে এবার জেলা প্রশাসন মাটির ভাঁড় ব্যবহার করার উদ্যোগ নিচ্ছে। প্লাস্টিক বা কাগজের কাপ নয়, সরকারি কর্মী-আধিকারিক এমনকি দপ্তরে কোনও অতিথি এলে তাঁকেও মাটির ভাঁড়ে চা দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলা শাসক (জেলা পরিষদ) সৌমেন দত্ত বলেন, ‘কোচবিহারে প্রচুর মৃৎশিল্পী রয়েছেন। তবে বাজার হারিয়ে অনেকে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। মাটির ভাঁড় তৈরি করে তাঁরাও স্বাবলম্বী হবেন। স্থানীয় স্তরে মাটির ভাঁড় কিনে ব্যবহার করতে প্রতিটি সরকারি দপ্তরে বলা হয়েছে। আমি নিজেও অফিসে মাটির ভাঁড়ে চা খাই।’
প্রশাসন সূত্রে খবর, পরিবেশরক্ষা ও মৃৎশিল্পীদের কথা মাথায় রেখে এই অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সরকারি কোনও নির্দেশিকা জারি করে নয়। বরং সরকারি দপ্তরগুলিতে সচেতনতার মাধ্যমে এই প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সরকারি এই উদ্যোগে মৃৎশিল্পীদের মধ্যে আশার আলো দেখা গিয়েছে। তুফানগঞ্জের এক মৃৎশিল্পী মহেশ পালের কথায়, ‘অনেক চায়ের দোকানে মাটির ভাঁড় সরবরাহ করি। সরকারিভাবে অর্ডার পেলে রোজগার বাড়বে।’
কোচবিহারে গত চার-পাঁচ বছর ধরে মাটির ভাঁড়ে চা জনপ্রিয় হচ্ছে। খাগড়াবাড়ি, সাগরদিঘি, ব্যাংচাতরা রোড ও তোর্ষার বাঁধের রাস্তা সহ নানা জায়গায় মাটির ভাঁড়ে চা পাওয়া যায়। চাহিদাও বেশ ভালো বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। পরিবেশপ্রেমীরাও এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। পরিবেশপ্রেমী পলাশ বর্মনের বক্তব্য, ‘পরিবেশবান্ধব মাটির ভাঁড়ের ব্যবহার বাড়লে তা প্রত্যেকের জন্য ভালো। এটি প্রশাসনের ভালো উদ্যোগ।’ তবে হিসেব বলছে, কাগজ বা প্লাস্টিকের কাপের পরিবর্তে মাটির ভাঁড়ের দাম তুলনামূলক বেশি। ফলে সরকারি দপ্তরগুলিতে বাড়তি খরচের আশঙ্কা রয়েছে। যদিও আধিকারিকদের দাবি, পরিবেশ ও মৃৎশিল্পীদের কথা মাথায় রেখে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।