কোচবিহার: বিজেপির রাজ্য সভাপতি হিসেবে শমীক ভট্টাচার্য নয়, দিলীপ ঘোষকে পছন্দ দলেরই কোচবিহারের সাংসদ নগেন রায়ের। এ প্রসঙ্গে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন নগেন। দলের নতুন রাজ্য সভাপতি নিয়ে বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসা করা হলে নগেন বলেন, ‘বিজেপি বড় ভুল করল। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ হলেই ভালো হত।’ দলের নতুন রাজ্য সভাপতি সম্পর্কে দলেরই সাংসদ এমন মন্তব্য করায় রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।
বিজেপির কোচবিহারের নেতৃত্ব অবশ্য বেশি কথা বলে বিতর্ক আরও বাড়াতে নারাজ। দলের সাংসদের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ বর্মন বলেন, ‘এটা কেন্দ্র-রাজ্য উঁচু স্তরের ব্যাপার। এই নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’ তবে জেলা সভাপতি প্রকাশ্যে কিছু না বললেও জল্পনা তো আর থেমে থাকছে না। নগেন কেন এমন মন্তব্য করলেন তা নিয়ে অঙ্ক কষা শুরু হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ বলছে, নগেন নাকি এখন তৃণমূলের দিকে ঝুঁকে রয়েছেন। সেজন্য ছক কষেই এমন মন্তব্য করছেন। আবার আরেকটা অংশ বলছে, ‘সতীর্থ’ শমীকের এই উত্থান দেখে হিংসায় তিনি এসব বলছেন। কারণ কোনটা, সেই ব্যাখ্যা অবশ্য নগেনের কাছ থেকে মেলেনি।
রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশের মতে, নগেন অনেকটা তৃণমূলের দিকে ঝুঁকে রয়েছেন। কোচবিহারে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর ‘ঝোঁক’ আরও বেড়েছে। লোকসভা নির্বাচনের পর কোচবিহারে এসে মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ করে নগেনের বাড়িতে যান। সেখানে তাঁদের মধ্যে বৈঠকও হয়। যা নিয়ে জোর জল্পনা ছড়ায়। তারপরেও বিভিন্ন জায়গায় সংবাদমাধ্যমের সামনে একাধিকবার দলবিরোধী মন্তব্য করেছেন নগেন। যাতে বারবার অস্বস্তিতে পড়েছে পদ্ম শিবির। কিন্তু তারপরেও তাঁকে কোনও অনুশোচনা করতে দেখা যায়নি। নগেন যে অনেকটাই তৃণমূলের দিকে ঝুঁকে রয়েছেন তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি বিজেপিরও। এই অবস্থায় বিজেপির রাজ্য নেতা শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ ও সুকান্ত মজুমদারদের মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দলের কথা কারও অজানা নয়। তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব, বিশেষ করে আইপ্যাক চাইছিল, বিজেপির রাজ্য সভাপতি এই তিনজনের মধ্য থেকেই কেউ হোক। তাহলে তাদের কোন্দল বজায় থাকবে। আর তাতে আখেরে লাভ হবে তৃণমূলেরই। তৃণমূলের সেই স্ট্র্যাটেজি বুঝতে পেরেই হয়তো বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শমীককে রাজ্য সভাপতি করে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছে। যেটা একেবারেই ভালোভাবে নিচ্ছে না তৃণমূল। তাই হয়তো নগেনকে দিয়ে কোন্দল জিইয়ে রাখার একটা চেষ্টা চলছে।
এই ‘সেটিং তত্ত্ব’ থেকে অবশ্য ‘হিংসা তত্ত্ব’ অনেকটা সরল। নগেন ও শমীক দুজনই বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ। অপারেশন সিঁদুরের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভারত সরকার যে সাংসদদের দল পাঠিয়েছিল, তার মধ্যে একটি দলে শমীক ছিলেন। কিন্তু নগেন সেই সুযোগ পাননি। এখন আবার শমীক দলের রাজ্য সভাপতি হয়েছেন। শমীক বারবার লাইমলাইটে এলেও নগেন সেই সুযোগ পাচ্ছেন না। সেটাই হয়তো মেনে নিতে না পেরেই এমন শমীক-বিরোধী মন্তব্য করেছেন তিনি। বলছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
তবে তাঁর এই মন্তব্য ভালো চোখে দেখছেন না বিজেপির নেতারা। জেলা বিজেপির প্রথম সারির এক নেতা বলেন, ‘শমীক ভট্টাচার্যকে রাজ্য সভাপতি করায় তৃণমূলের অনেক ছক গুলিয়ে গিয়েছে। আর তৃণমূলের হাতে তামাক খাওয়া নগেনের সে কারণেই গাত্রদাহ হয়েছে।’