গৌরহরি দাস, কোচবিহার: প্রতিবেশী জেলা আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদ মেন্টর ও কোমেন্টর পেলেও কোচবিহার জেলা পরিষদ ওই পদ দুটি থেকে এখনও বঞ্চিত (Cooch Behar)। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর কোচবিহার জেলা পরিষদে শাসকদলের বর্ষীয়ান নেতা সুবল রায়কে মেন্টর ও নিরঞ্জন দত্তকে কোমেন্টর পদে বসানো হয়। তবে ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর বেশ কিছু জেলা পরিষদে পুনরায় মেন্টর ও কোমেন্টর ঠিক করা হলেও কোচবিহার জেলা পরিষদ তা থেকে এখনও ব্রাত্য। ফলে সেখানে আদৌ মেন্টর বা কোমেন্টরের পদ দেওয়া হবে কি না তা নিয়ে এখনও কোনও নিশ্চয়তা নেই।
কোচবিহার জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুমিতা বর্মন জানিয়েছেন ওই পদগুলি বা তাদের কাজের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। আর প্রাক্তন মেন্টর সুবল রায় বলেন, ‘কেন এবার এখানে ওই পদ দেওয়া হল না তা জানি না।’
জেলা পরিষদের বিভিন্ন কাজকর্মে পরামর্শ দেওয়া ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করাই হল মেন্টর বা কোমেন্টরের কাজ। পদ না দেওয়া নিয়ে তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা তথা কোচবিহার জেলা পরিষদের গত দফার কোমেন্টর নিরঞ্জন দত্ত বলেন, ‘দলের কাছে হয়তো আমাদের তেমন গুরুত্ব নেই। তাই জেলা পরিষদের এই পদে এখনও কেউ নেই। দলের জেলা নেতৃত্ব উদ্যোগ নিলে হয়তো এখানেও পদটি রাখা যেত।’
কোচবিহার জেলা পরিষদে মোট ৩৪টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩-এর পঞ্চয়েত নির্বাচনে ৩২টি আসনে তৃণমূল জেতে। বাকি দুটি আসন ছিল বিজেপির। অনেকের মতে, বর্তমানে কোচবিহারের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জেলা পরিষদে মেন্টর বা কোমেন্টর পদ না থাকলেও তেমন অসুবিধা নেই। যদিও প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে গতবার কেন এই পদ দেওয়া হয়েছিল? রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর ২০১৯-এ ওই পদ দুটি দেওয়ার পেছনে অন্য কারণ ছিল।
সেসময় কোচবিহারে শাসকদলের জেলা সভাপতি তথা তৎকালীন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়ের কোন্দল চরমে উঠেছিল। কোচবিহারে তৃণমূলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি তখন একেবারেই ভালো ছিল না। সংগঠনের রাশ ধরার জন্য জেলা পরিষদে ওই পদ দুটির প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। তারপর লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহারে তৃণমূল হারার পরও দুই-আড়াই বছরের মধ্যে প্রায় পাঁচ থেকে ছ’বার দলের জেলা সভাপতি পরিবর্তন করা হয়। সবমিলিয়ে সেসময় জেলায় দলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি চরম সংকটে ছিল। কিন্তু গত দুই-তিন বছর ধরে জেলায় দলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তাছাড়া গত পঞ্চায়েত নির্বাচন, লোকসভা নির্বাচনেও কোচবিহারে শাসকদলের ফলাফল ভালো হয়েছে। সম্ভবত সেকারণেই কোচবিহার জেলা পরিষদে ওই পদ দুটি দেওয়া নিয়ে আর মাথা ঘামাচ্ছে না তৃণমূল।
আবার রাজনৈতিক মহলের দাবি, জেলা পরিষদে মেন্টর ও কোমেন্টর পদ থাকলে কাজ অনেক সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়। ফলে ওই পদ দুটি ফাঁকা রাখা বাঞ্ছনীয় নয়।