মাথাভাঙ্গা: রীতিমতো আশা জাগিয়ে বন বিভাগের উদ্যোগে বছর ছয়েক আগে মাথাভাঙ্গার তেকুনিয়াতে উত্তরবঙ্গের প্রথম ভেষজ উদ্ভিদ চাষ প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল। তেকুনিয়া ইকো পার্ক সংলগ্ন এলাকায় বনকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রকল্পটির সূচনা করেছিলেন রাজ্যের তৎকালীন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। বিকল্প অর্থনীতিতে ভেষজ উদ্ভিদ চাষ কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়েও তৎকালীন বনমন্ত্রী সহ বনকর্তারা কৃষকদের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তেকুনিয়াতে ভেষজ উদ্ভিদ চাষ প্রকল্প গড়ার উদ্দেশ্যে প্রথম ধাপে ১৫ হেক্টর জমিতে ৬০ লক্ষ টাকা অনুমোদনও হয়েছিল। কিন্তু আজও সেই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। এ বিষয়ে প্রাক্তন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনের বক্তব্য, ‘আমি বনমন্ত্রী থাকাকালীন প্রকল্পটি শুরু করেছিলাম। তবে শেষপর্যন্ত কেন বাস্তবায়িত হল না, সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।’
প্রকল্পের সূচনার সময়ে বন দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটির (জেএফএমসি) সদস্যরাই ভেষজ উদ্ভিদ চাষ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন। এই ঘোষণা শুনে সে সময় আশায় বুক বাঁধছিলেন যতীন্দ্র দাস, সুবল বর্মন, অমল মজুমদারের মতো তেকুনিয়া, ভোজনেছড়া, চকিয়ারছড়া জেএফএমসি’র ৯৬ জন সদস্য। কিন্তু প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ায় তাঁরা হতাশ।
২০১৯ সালের ১০ মার্চ তেকুনিয়াতে ভেষজ উদ্ভিদ চাষ প্রকল্পের সূচনার পর তেকুনিয়া ইকো পার্কের শিশু উদ্যানের ভেতর কয়েকটি ডেমনস্ট্রেশন বেড তৈরি হয়। সেখানে সর্পগন্ধা, অশ্বগন্ধা, শতমূলী ও গুরমার চাষ শুরু হয়েছিল। যতীন্দ্র দাস বলেন, ‘প্রকল্প বলতে ওটুকুই দেখেছি। এখন সেখানে একটিও ভেষজ উদ্ভিদ নেই। বলা হয়েছিল, প্রকল্পের জন্য অর্থবরাদ্দ হয়েছে। বড় আকারে ভেষজ চাষের জন্য জেএফএমসি সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যদিও পরবর্তীকালে কোনও অর্থও আসেনি। আমাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়নি। জেএফএমসি সদস্যা সুনতী বর্মনের অভিযোগ, ‘ভেবেছিলাম, ভেষজ উদ্ভিদ চাষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমাদের আর্থিক হাল ফিরবে। কিন্তু তা আর হল কই?’ হতাশার সুরে চন্দ্রনাথ বর্মন বলেন, ‘প্রকল্পটির বিষয়ে বারবার বনকর্তাদের কাছে খোঁজ নিলেও আশ্বাস ছাড়া কিছু পাইনি।’
প্রাক্তন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, ‘বন দপ্তর ও রাজ্য সরকার চাইছে ঐতিহ্যবাহী ভেষজ গাছগাছড়ার ব্যবহার আবার ফিরে আসুক। তাই তেকুনিয়াতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়া উচিত ছিল। তবে কেন হল না, বলতে পারব না।’ বন বিভাগের কোচবিহারের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘খোঁজ নিয়ে দেখব। লার্জ স্কেলে সেখানে ভেষজ উদ্ভিদ চাষের বিষয়টি আমার জানা নেই।’