শিবশংকর সূত্রধর, কোচবিহার: নিকাশিনালার জল মন্দিরের ভিতরে ঢুকে পড়ায় ডুবতে বসেছে শিবলিঙ্গ (Shivling)! হেরিটেজের তালিকায় থাকা কোচবিহার (Cooch Behar) শহরের অনাথনাথ শিব মন্দিরের এমন হালে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ভক্তদের মধ্যেও চরম ক্ষোভ শুরু হয়েছে। দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের বিরুদ্ধে চরম উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছে। দ্রুত মন্দিরের নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করার দাবিতে সরব হয়েছে বিভিন্ন মহল। যদিও সদর মহকুমা শাসক তথা দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের অন্যতম সদস্য কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘বিষয়টি জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে দেখে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’
শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে শিবদিঘির উলটো পাশেই অনাথনাথ শিব মন্দিরটি রয়েছে। ইতিহাসবিদদের কথায়, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ বা উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ওই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কোচবিহারের মহারাজারা শিবের উপাসনা করতেন। শহর ও সংলগ্ন এলাকায় শিবের বেশ কিছু মন্দির রয়েছে। কিন্তু ওই মন্দিরটির বেহাল দশায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে বিভিন্ন মহলে। মন্দির লাগোয়া জমিতে নিকাশি ব্যবস্থা রয়েছে। সেই জল বের হতে না পারায় সেখানেই জমে রয়েছে। উলটে বাইরে থেকে জল এসে সেখানে জমা হচ্ছে। শিবলিঙ্গে ভক্তরা জল ঢালেন। সেই জল যাতে বাইরে বেরিয়ে যায় সেজন্য মন্দিরে একটি ছিদ্র রাখা হয়েছে। কিন্তু বাইরের নিকাশিনালার জল সেদিক দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করছে। বৃষ্টি হলে সেই সমস্যা আরও বেড়ে যায়। মন্দিরের পুরোহিত বৈকুণ্ঠনাথ তিওয়ারি বলেন, ‘মন্দিরটির পরিকাঠামোর খুবই খারাপ অবস্থা। ভক্তরা পুজো দিতে এসে হতাশ হয়ে যান।’
স্থানীয় বাসিন্দারা এখানে প্রতিদিনই পুজো দেন। শিবরাত্রি সহ বছরের বিশেষ দিনগুলিতে বাইরে থেকেও পুণ্যার্থীরা আসেন। স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্ব ধরের বক্তব্য, ‘রাজ আমলের এই মন্দিরটি সংস্কার করা প্রয়োজন। দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের উচিত এবিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করা।’ স্থানীয় কাউন্সিলার শুভ্রাংশু সাহা এবিষয়ে বলেছেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই এই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি। আশা করছি দ্রুত সমস্যা মিটবে।’
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফেও বিষয়টি নিয়ে নিন্দা প্রকাশ করা হয়েছে। পরিষদের কোচবিহারের সম্পাদক রূপম দে’র কথায়, ‘নিকাশিনালার জল শিবলিঙ্গে পৌঁছে যাচ্ছে, এটি কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা শীঘ্রই দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের কাছে চিঠি পাঠাব যাতে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।’
কোচবিহারজুড়েই রাজ আমলের নানা নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে। অনেক নিদর্শনই রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে সেগুলি দ্রুত সংস্কারের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে।