কোচবিহার: অঙ্কটা খুব সহজ। একেকটা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ৬ থেকে ৮ হাজার মহিলা বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। আর মহিলা ভোটব্যাংককে দখলে রাখতে পারলেই যে নির্বাচনে জয়লাভের কেল্লা অনেকখানিই ফতে, সেকথা ভালো করেই জানে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। তাই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে তৃণমূল। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ভালো ফলাফলের লক্ষ্যে তাই শাসকদলের পাখির চোখ স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে যাঁরা নিয়ন্ত্রণ করেন, সেই কমিউনিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (সিএসপি) তথা সামাজিক সেবার পরিচালকরা।
রবিবার কোচবিহারে তৃণমূলের জেলা কার্যালয়ে জেলার বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে আসা সিএসপিদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন দলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। আগামী সপ্তাহে সিএসপিদের নিয়ে কোচবিহারে জেলা সম্মেলন করবেন বলে অভিজিৎ জানিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে দলীয় স্বার্থে সিএসপিদের যাতে আরও ভালোভাবে কাজে লাগানো যায়, সেই উদ্দেশ্যেই তৃণমূলের এই কর্মসূচি।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি বললেন, ‘সামনে সংঘের নির্বাচন রয়েছে। সেই নির্বাচনে আমরা জিততে চাই। নির্বাচনে জিতে জেলার যে সমস্ত জায়গায় তৃণমূলবিরোধী মনোভাবাপন্ন সিএসপি রয়েছেন, তাঁদের আমরা বদলে দেব।’
এই সিএসপিদের কাজ কী? তৃণমূলই বা তাঁদের এত গুরুত্ব দিতে চাইছে কেন? কোচবিহার জেলার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে তিনজন করে সিএসপি সদস্য রয়েছেন। তাঁদের কাজ হচ্ছে, প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে যে ৪০০ থেকে ৭০০ বা তারও বেশি স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে, সেগুলি পরিচালনা করা ও গোষ্ঠীগুলিকে নানাভাবে সহযোগিতা করা। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল সিএসপি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের জেলা সভানেত্রী পিংকি বর্মন, ঘুঘুমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিএসপি এহমিনা পারভিনরা জানালেন, তাঁদের কাজ হল মূলত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সংগঠনে সহায়তা করা। গোষ্ঠীর সদস্যদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। তাঁদের রেজোলিউশন লিখতে সহায়তা করা। এছাড়া ছয় মাস পরপর স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির ৩০ হাজার টাকা করে যে রিভলভিং ফান্ড (আরএফ) পাওয়ার কথা, সেটা যাতে তারা ঠিকভাবে পায় তারও ব্যবস্থা করা। প্রশ্ন হচ্ছে, এই সিএসপিদের এত গুরুত্ব দিতে চাইছে কেন তৃণমূল? বিধানসভা নির্বাচনে তাঁরা কোন কাজে লাগবে? তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, তাঁরা চাইছেন, নির্বাচনে গ্রামের মহিলারা যাতে তৃণমূলের স্বার্থে কাজ করেন। আর সেটা সম্ভব এই সিএসপিদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে। কারণ, প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪০০ থেকে ৭০০ স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে। আবার প্রতিটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে ন্যূনতম ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ জন করে সদস্যা রয়েছেন। অর্থাৎ এই হিসাবে দেখতে গেলে প্রায় প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ৬ থেকে ৮ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা সদস্য রয়েছেন। যাঁদের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন গ্রাম পঞ্চায়েতের এই তিনজন করে সিএসপি। জেলার ১২৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত ধরে হিসাব করলে জেলায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা সদস্য রয়েছেন ৭ থেকে ৮ লক্ষ। আর তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করেন ৩৮৪ জন সিএসপি। সেই ৩৮৪ জনকে হাতে রেখে সেই ৮ লক্ষ মহিলাকে হাতে রাখতে চাইছে তৃণমূল।