মনোজ বর্মন, শীতলকুচি: রুপোলি পর্দার দুনিয়ায় এমন উদাহরণ তো কতই আছে। ধরম সিং দেওল (ধর্মেন্দ্র) হেমা মালিনীর প্রেমে পাগল হয়েছিলেন। তবে প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে মন চায়নি। কিন্তু প্রেমের টানও বড় বালাই। অগত্যা ধর্ম বদলে মুসলমান হয়ে হেমা মালিনীকে বিয়ে। শর্মিলা ঠাকুর ধর্ম বদলে বেগম আয়েষা সুলতানা হন। তারপর মনসুর আলি খান পতৌদিকে বিয়ে করেন। সেই প্রেমের টানেই। একই টানে সাড়া দিয়ে ওডিশার সুশান্ত দাস হয়েছেন শামিম রহমান। আজকাল কোচবিহারের (Cooch Behar) শীতলকুচিতে (Sitalkuchi) বাস। রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের সাব–ডিলার তরুণকে লোকে চেনে ‘বিহারি’ নামে। সুশান্ত থেকে শামিম, বিহারির এই যাত্রাপথ রুপোলির দুনিয়ার কোনও ধুমধাড়াক্কা গল্পের তুলনায় কিন্তু কম রোমাঞ্চকর নয়।
নয় বছর আগের ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া যাক। একদিন শীতলকুচির বাসিন্দা লাজমেরিকা ইয়াসমিনের ফোনে রং নম্বর থেকে একটি কল এল। ইট ব্যবসায়ী সুশান্ত তখন টগবগে তরুণ। রং নম্বর হলেও কথায় কথা বাড়ল। আর এই সূত্রেই দুজনের মন দেওয়া-নেওয়া। দুজনের কারও কাছেই সেই সময় স্মার্টফোন ছিল না। তাই দুজনার দুজনকে দেখাও হয়নি। বন্ধুদের নিয়ে সুশান্ত একদিন শীতলকুচি এলেন। স্কুলপড়ুয়া প্রেমিকার সঙ্গে দেখাও করলেন। প্রেমের বাঁধন আরও দৃঢ় হল। দুজনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু ধর্ম বাধা হয়ে দাঁড়াল। অন্য ধর্মে বিয়ে কিছুতেই মেনে নেওয়া হবে না বলে দুই পরিবারই সাফ জানিয়ে দেয়।
অতএব? দুজনে পালিয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন। স্কুলে যাওয়ার কথা বলে লাজমেরিকা সেদিন বাড়ি থেকে বের হয়। বন্ধুদের নিয়ে সুশান্ত একটি গাড়িতে করে মাথাভাঙ্গা–সিতাই সড়কে অপেক্ষা করছিলেন। শীতলকুচির রাস্তাঘাট সেভাবে চেনা ছিল না। ধরা পড়লে কারও হাড়গোড় আস্ত থাকবে না বলেও জানা ছিল। তাই এলাকায় কোথাও না নেমে সবাই মিলে গুয়াহাটি পাড়ি। সেখানে কিছুদিন থেকে কোচবিহারে ফিরে একটি হোটেলে ওঠা। নিজেরাই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া। দুজনের কোনও অভিভাবক সেদিন সঙ্গে ছিলেন না। অতএব ৫০০ টাকা দিয়ে অচেনা একজনকে নিজেদের অভিভাবক সাজিয়ে বিয়ের আইনি কাগজে সই।
এপর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। তারপরই কাহানি মে টুইস্ট। দুজনে কোচবিহারে রয়েছে বলে লাজমেরিকার বাড়ির সদস্যরা খবর পান। সেখানে গিয়ে দুজনকে পাকড়াও করে শীতলকুচিতে নিয়ে আসা হয়। বিয়ে ভেঙে দেওয়ার জন্য সুশান্তকে নানাভাবে চাপ দেওয়া শুরু হয়। হুমকিতে কাজ না হওয়ায় মারধর। ভালোবাসাকে টিকিয়ে রাখতে সুশান্ত সবই দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করেন। পরে যখন তাঁকে ধর্ম পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হয়, সুশান্ত আর ‘না’ করেননি। আর এই সূত্রেই তাঁর শামিম রহমান হয়ে ওঠা। লাজমেরিকার পরিবারই এরপর দুজনকে সামাজিকভাবে বিয়ে দেয়।
তারপর থেকে দুজনে ভালোই আছেন। এক পুত্রসন্তানের সুবাদে পরিবারের সদস্যসংখ্যা বেড়ে তিন হয়েছে। এভাবে ধর্ম পরিবর্তন করে কোনও আফসোস হয়? শামিম অপকট, ‘ধর্মে কীই বা আসে যায়। সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই। সব সামলে যদি সেই মানুষ ভালো থাকতে পারে তবে তার থেকে ভালো আর কিছুই হতে পারে না।’ স্ত্রীকে নিয়ে ভালো থেকে শামিম সেটাই প্রমাণ করে দিয়েছেন।