গৌরহরি দাস, কোচবিহার: বাংলা বলার জন্য বাংলাদেশি (Bangladeshi) সন্দেহে ফের সিরোজ আলম মিয়াঁ নামে কোচবিহারের (Cooch Behar) এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার (Arrest) করল পুলিশ। ৩৮ বছর বয়সি সিরোজ কোচবিহার-১ ব্লকের জিরানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়বালাসি গ্রামের বাসিন্দা। রবিবার বিকাল ৪টে নাগাদ তাঁকে হরিয়ানার গুরগাঁও এলাকার পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ঘটনার কথা জানাজানি হতে জিরানপুরে তাঁর পরিবারে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে কোচবিহার কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ জানাতে গেলেও তা নেওয়া হয়নি। এরপর ওই পরিবারের সদস্যরা তাঁদের এলাকার বাসিন্দা তথা তৃণমূলের মুখপাত্র পার্থপ্রতিম রায়ের দ্বারস্থ হন। সোমবার দুপুরে পার্থ ধৃতের বাবা ও ভাইকে নিয়ে গিয়ে ভারতীয় নাগরিকত্বের সমস্ত নথিপত্র জেলা শাসকের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত জেলা শাসক শান্তনু বালার কাছে জমা দেন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা শাসক অরবিন্দকুমার মিনা।
কয়েকদিন আগেই বাংলা বলার অপরাধে বাংলাদেশি সন্দেহে কোচবিহারের দিনহাটার সাবেক ছিটমহলের সাতজন বাসিন্দাকে দিল্লির শালিমারবাগ থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে সাতদিন আটকে রেখেছিল। তাঁরা সকলেই দিনহাটার কৃষিমেলার মাঠ সংলগ্ন সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের জন্য নির্মিত আবাসনের বাসিন্দা ছিলেন। পরে দিনহাটা থানার পুলিশ তাঁদের সমস্ত নথিপত্র দিল্লির শালিমারবাগ থানায় পাঠালে পুলিশ তাঁদের ছেড়ে দেয়। এই অবস্থায় কোচবিহারের এক বাসিন্দাকে বাংলাদেশি সন্দেহে ফের গ্রেপ্তার করার ঘটনায় জেলা থেকে ভিনরাজ্যে কাজের জন্য যাওয়া বাসিন্দাদের পরিবারে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
সিরোজের ভাই ছকিমুদ্দিন মিয়াঁ বলেন, ‘দাদাকে বাংলাদেশি সন্দেহে গুরগাঁওয়ের সেক্টর ৫৫ থানার পুলিশ রবিবার বিকালে গ্রেপ্তার করে। দাদা তাদের আধার কার্ড, প্যান কার্ড দেখানোর পরেও পুলিশ মানছে না। দু’একদিন দেখি কী হয়। নাহলে দাদাকে ছাড়ানোর জন্য আমাদের ওখানে যেতে হবে।’
পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, সিরোজের দুই ছেলেমেয়ে দিনহাটার বাড়িতে থাকে। স্ত্রীকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সিরোজ হরিয়ানায় কাজ করেন। সিরোজের শ্যালকও সেখানেই থাকেন। সিরোজের বাবা জাহেরউদ্দিন মিয়াঁ বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে ছেলে হরিয়ানায় থাকে। সেখানে সে একটি হোটেল ও জিম দুই জায়গায় কাজ করে। রবিবার হোটেল থেকে বিকাল ৪টে নাগাদ কাজ করে কোয়ার্টারে ফেরার পথে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর কোয়ার্টারে গিয়ে ছেলে ও ছেলের বৌয়ের মোবাইল পুলিশ নিয়ে যায়। ঘটনার খবর পেয়ে আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। কী করব, ছেলেকে কীভাবে ছাড়াব বুঝতে পারছি না। এখানে থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলাম। থানা অভিযোগ নেয়নি। পরে পার্থর সঙ্গে আজকে জেলা শাসকের দপ্তরে এসেছি।’
৭২ বছর বয়সি জাহেরউদ্দিনের চার ছেলে ও এক মেয়ে। সিরোজ তাঁর দ্বিতীয় ছেলে। জাহেরের জন্মও জিরানপুরেই বলে তিনি জানিয়েছেন। তৃণমূলের মুখপাত্র বলেন, ‘সিরোজ আমাদের জিরানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। তাঁর বৃদ্ধ বাবা জাহেরউদ্দিনকে আমরা ছোটবেলা থেকে চিনি। তিনি গ্রাম পঞ্চায়েতে কর সংগ্রহের কাজ করতেন। সিরোজ পাঁচ বছর সৌদি আরবে কাজ করেছিল। তার পাসপোর্ট রয়েছে। শুধুমাত্র বাংলা বলার অপরাধে তাকে বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ পার্থ বলেন, ‘আমরা আজকে তার ভোটার কার্ড, আধার কার্ড থেকে জমির কাগজপত্র সহ সমস্ত নথিপত্র জেলা শাসকের দপ্তরে অতিরিক্ত জেলা শাসকের কাছে জমা দিয়েছি। জেলা শাসকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন জেলা পুলিশ সহ আমরা সকলে খোঁজ করে তাকে উদ্ধার করার ব্যবস্থা করব। আমরা দু’একদিন দেখব। কোনও ব্যবস্থা না হলে বিষয়টি নিয়ে আমরা মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হব।’
বিষয়টি নিয়ে বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে কাজ না পেয়ে বিভিন্ন পরিযায়ী শ্রমিক ভিনরাজ্যে কাজে যান। যখন তাঁরা বাংলা ভাষায় কথাবার্তা বলেন তখন স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ হয় এঁদের কাগজপত্র ঠিক আছে কি না, বাংলাদেশের নাগরিক কি না। সেগুলো চেকিং চলছে। যদি কাগজপত্র সব ঠিক থাকে তাহলে তো ভয়ের কোনও কারণ নেই।’