শীতলকুচি: ভিসা করে ভারতে এলেও দেশে ফেরেননি বাংলাদেশের বাসিন্দা ধনেশ্বর রায়। তাঁর তিন ছেলেকে নিয়ে এসে এপারেই সংসার পেতে বসেছেন দিব্যি। ধনেশ্বরের অবশ্য ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরি না হলেও নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে এপারের এক ব্যক্তিকে বাবা দেখিয়ে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড বানিয়ে ফেলেছেন ধনেশ্বরের তিন ছেলে। এমনই ঘটনা শীতলকুচি ব্লকের নগর লালবাজার গ্রামের। ওই গ্রামের সুখানদিঘি এলাকায় পরিবার নিয়ে জমি কিনে বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন বাংলাদেশের হাতিবান্ধা থানার নোওদাবাস এলাকার বাসিন্দা ধনেশ্বর। পাসপোর্ট বানিয়ে এদেশে এসেছিলেন ধনেশ্বর। তাঁর পাসপোর্টের মেয়াদ ২০২৩ সালে শেষ হয়ে গেলেও তিনি আর দেশে ফেরেননি। যদিও আগেই ভারতে পর্যায়ক্রমে এসে ছেলেদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। মেজো ছেলে বাদল বর্মন এপারের বাসিন্দা পুষ্পা বর্মনকে মা বানিয়ে এদেশের পরিচয়পত্র বানিয়েছেন। অপর ছেলে হৃদয় বর্মন ও মণীন্দ্র বর্মন ভারতীয় এক বাসিন্দাকে তাঁদের অভিভাবক সাজিয়ে ভারতের পরিচয়পত্র বানিয়েছেন। ওপার থেকে এদেশে এসে জমি কিনে বাড়িঘর বানালেও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নজরে কেন আসেনি? বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। যদিও এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য খবির হোসেন বলেন, ‘আমি পঞ্চায়েত হওয়ার আগে থেকেই ওই পরিবারটি গ্রামে বাড়ি করে আছে। তাঁরা বাংলাদেশ থেকেই এসেছেন। কীভাবে এখানে পরিচয়পত্র বানিয়েছেন তা জানা নেই। পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করুক।’
এই ব্যাপারে শীতলকুচি থানার ওসিকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি। শীতলকুচির বিডিও সোফিয়া আব্বাস বলেন, ‘বিষয়টি এর আগে কেউ আমার নজরে আনেননি। খোঁজ নিয়ে পুলিশের নজরে আনা হবে।’
ধনেশ্বর দাবি করেছেন, বাংলাদেশে পূজার্চনা করতে বারবার বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ধর্মীয় অত্যাচার সহ্য করতে না পেরেই ভারতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সিএএ-তে নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদন জানিয়েছি। আমার ছেলেরা এদেশের পরিচয়পত্র পেয়েছে। ভারতেই থাকতে চাই আমি।’
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই গ্রামে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে জোর চর্চা। বিজেপির শীতলকুচি বিধানসভার বিধায়ক বরেনচন্দ্র বর্মনের কথায়, ‘এরকম গোটা রাজ্যেই আছে। নতুন কোনও ঘটনা নয়। তবে যাঁরা ধর্মের ভিত্তিতে এদেশে এসেছেন তাঁদের নাগরিকত্ব দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। সিএএ-তে আবেদন করুন তাঁরা।’
তৃণমূল কংগ্রেসের শীতলকুচি ব্লক সভাপতি তপনকুমার গুহ বলেন, ‘বিধায়কের কথায় তো নাগরিকত্ব হবে না কারও। দেশ ও রাজ্যের আইনি ব্যবস্থা রয়েছে। বিষয়টি পুলিশ ও প্রশাসন দেখবে।’