শিবশংকর সূত্রধর, কোচবিহার: নামেই যমুনাদিঘি, আসলে এঁদো পানাপুকুর। কতদিন যে পরিষ্কার হয়নি তার ইয়ত্তা নেই। গোটা পুকুরজুড়ে আবর্জনা, কচুরিপানায় ভর্তি। পাড়ে জমে আবর্জনার স্তূপ। দুর্গন্ধে কাছে ঘেঁষাই দায়। আর সেই এঁদো পুকুরেই বৃহস্পতিবার বিসর্জন হল কোচবিহার (Cooch Behar) রাজপরিবারের বড়োদেবীর। রাজ আমল থেকেই প্রথা মেনে বড়োদেবীর বিসর্জন হয় যমুনাদিঘিতেই। তা সত্ত্বেও কেন বিসর্জনের আগে দিঘি পরিষ্কার করা হল না, সেই প্রশ্ন উঠেছে সব মহলেই।
শহর হেরিটেজ হয়েছে৷ কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারের কাজ চলছে। সেই সময় ঐতিহ্যবাহী বড়োদেবীর বিসর্জনে অবহেলায় ফুঁসছে কোচবিহারবাসী। যমুনাদিঘি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে জেলা শাসক এবং পুরসভার অফিস। তাও যমুনাদিঘির দুরবস্থা কেন নজর এড়াল তা নিয়ে শুরু হয়েছে তর্জা ও দায় ঠেলাঠেলি।
পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য দায় এড়িয়ে বলেছেন, ‘আগে আমরাই দিঘি পরিষ্কার করতাম। এবার দিঘিটি সংস্কারের জন্য প্রশাসনের তরফে ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দিঘিটি তাদের অধীনেই রয়েছে। তারাই কিছুটা পরিষ্কার করেছে।’ ক্ষোভের সুরে স্থানীয় ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার অভিজিৎ মজুমদারের বক্তব্য, ‘এখানে বড়োদেবীর বিসর্জন দেওয়া হয়। অথচ জায়গাটি পরিষ্কার করা হয়নি। প্রশাসনের তরফে আমাদের বলা হলে নিশ্চয়ই পরিষ্কারের ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু প্রশাসন থেকে আমাদের সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। বিসর্জনের দিন সকালেই যখন দেখলাম পরিষ্কার হয়নি তখন তড়িঘড়ি একটি আর্থমুভার এনে কিছুটা কচুরিপানা সরিয়ে দিয়েছি।’ পুরসভার তরফে প্রশাসনের দিকে দায় এড়ানো হলেও দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের তরফে এবিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। বোর্ডের সচিব পবিত্রা লামাকে এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রশ্ন শোনেন। কিন্তু কোনও জবাব দেননি।
কোচবিহার শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে বড়োদেবীর মন্দিরের পেছন দিকেই যমুনাদিঘি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই এই দিঘিটির বেহাল অবস্থা। রীতি মেনে বড়োদেবীর বিসর্জন দশমীর সকালেই হয়। বড়োদেবীর মন্দিরের সামনে সিঁদুরখেলা শেষে দেবীকে ট্রলিতে চাপিয়ে দিঘিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিসর্জনপর্ব চলে। এই দৃশ্য দেখতে প্রতিবছরই বহু মানুষ ভিড় করেন। বৃহস্পতিবার অর্থাৎ দশমীর সকালে গিয়ে দেখা যায় যমুনাদিঘির কিছু অংশের কচুরিপানা তুলে পাড়েই স্তূপ করে রাখা হয়েছে। যা দেখে ক্ষুব্ধ হন দর্শনার্থীরা। স্থানীয় বাসিন্দা শিবেন্দ্রনাথ রায়ের কথায়, ‘বড়োদেবীকে ঘিরে আমাদের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। অথচ তাঁর বিসর্জনের জায়গাটি ঠিকমতো পরিষ্কার পর্যন্ত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এর থেকে লজ্জার আর কী হতে পারে। বড়োদেবীর কাছে প্রার্থনা করি যাতে প্রশাসন ও পুরসভাকে তিনি একটু শুভবুদ্ধি দেন।’
বিসর্জনের সময় পরিষ্কার না করা নিয়ে বিতর্ক তো রয়েছে। সেইসঙ্গে বিসর্জনের পর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও শুক্রবার বিকেলের দিকেও দিঘিতে বড়োদেবীর কাঠামো পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। সেটিও পরিষ্কার করা হয়নি। সবমিলিয়ে বড়োদেবীর বিসর্জনপর্ব নিয়ে পুরসভা ও প্রশাসন, দুই দপ্তরের দিকেই ব্যর্থতার আঙুল তুলেছেন সাধারণ মানুষ।