তুফানগঞ্জ: এ যেন পুষ্পা সিনেমার এক ছোটখাটো পুনর্নির্মাণ। ওখানে দেখিয়েছিল কীভাবে দুধ বহনকারী গাড়ির ভেতরে গোপন জায়গা বানিয়ে সেখানে চন্দন কাঠ রেখে পাচার করা হত। আর এখানে পণ্যবাহী গাড়ির ডালার নীচে তৈরি করা গোপন ক্যাবিনেটে রাখা হয়েছিল বিপুল পরিমাণ গাঁজা। আন্তঃরাজ্য মাদক পাচারে পুলিশি ধরপাকড় এড়াতে এরকমই ফিল্মি কায়দার সাহায্য নেওয়া হয়েছিল তুফানগঞ্জে। যদিও তাতে শেষরক্ষা হয়নি। শনিবার পাচারের পথে তুফানগঞ্জ থানার অন্তর্গত রায়ডাক নাকা চেকিং পয়েন্টে পুলিশি তৎপরতায় আটক হয় গাঁজাবোঝাই একটি লরি। ৪৪৪ কেজি গাঁজা সহ পুলিশের জালে গ্রেপ্তার এক।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে ১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর দিয়ে আসা লরিটিকে রায়ডাক নাকা চেকিং পয়েন্টে দাঁড় করিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছিল পুলিশ। সন্দেহ হওয়াতে কাটার দিয়ে লোহার তক্তা কাটতেই দেখা যায়, ভিতরে রয়েছে বিপুল পরিমাণে মাদক দ্রব্য। উদ্ধার হওয়া ৫৮ প্যাকেট গাঁজা ইতিমধ্যে বাজেয়াপ্ত করেছে তুফানগঞ্জ থানার পুলিশ। একইসঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে লরির চালককেও। অভিযুক্ত চালক গিল গুরদেও সিং-এর বাড়ি পঞ্জাবে। এই ঘটনার পেছনে আর কারা জড়িত, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। এদিন নাকা চেকিংয়ের সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন তুফানগঞ্জ মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কান্নিধারা মনোজ কুমার, সার্কেল ইনস্পেকটর সঞ্জয় দাস, তুফানগঞ্জ ও বক্সিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সহ এসটিএফ কলকাতা পুলিশের একটি দল।
এই ঘটনার পরেই শনিবার সন্ধ্যায় গোপন সূত্রে খবর পেয়ে, অসম ঘেঁষা বক্সিরহাট থানার জোড়াই মোড়ে এক দম্পতির কাছ থেকে হেরোইন উদ্ধার করেছে বক্সিরহাট থানার পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দম্পতির ব্যাগ থেকে উদ্ধার হওয়া ১১৪ গ্রাম হেরোইনের বাজারমূল্য প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। অভিযুক্তদের নাম আশিক আলি এবং আবেদা খাতুন, বাড়ি তুফানগঞ্জ-১ বালাভূত গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝাউকুঠিতে। ইতিমধ্যে পুলিশ ঘটনাটিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।
এদিনের দুই ঘটনা নিয়ে রাতেই সাংবাদিক বৈঠক করেন কোচবিহার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃষ্ণগোপাল মিনা। সেখানে তিনি বলেন, ‘এসটিএফ কলকাতা খবরটি প্রথমে আমাদের জানায়। এরপর আমাদের যৌথ প্রয়াসে মিশনটি সফল হয়েছে। প্রায় সাড়ে চারশো কেজি বাজেয়াপ্ত হওয়া গাঁজার আনুমানিক বাজারদর ২৭ লক্ষ টাকা।’ এত পরিমাণে মাদক দ্রব্য কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এদিকে, একই দিনে পরপর মাদক দ্রব্য উদ্ধার হতেই অনেকে আশঙ্কা করছেন যে, দিনের পর দিন মাদক পাচারের অন্যতম করিডর হয়ে উঠছে অসম-বাংলা সীমানার বক্সিরহাট এলাকা। বাইরের রাজ্য থেকে আসা পাচার সামগ্রীগুলি বক্সিরহাট করিডর হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন রাজ্যে। আবার উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি থেকে এই করিডর দিয়েই এ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, এই প্রথম নয়৷ এর আগেও একাধিকবার গাঁজা পাচারের চেষ্টা চালিয়েছিল পাচারকারীরা। তবে প্রতি ক্ষেত্রেই পুলিশ তাদের ধরে ফেলে৷ এক্ষেত্রেও আইনের চোখে ধুলো দিতে নতুন পদ্ধতি বেছে নিয়েছিল পাচারকারীরা। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি৷