কোচবিহার: কোচবিহারে কি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ক্ষেত্রে একে একে নিভিছে দেউটি? তৃণমূলের বিভিন্ন শাখা সংগঠন থেকে আস্তে আস্তে রাশ আলগা হচ্ছে রবির।
এতদিন কার্যত রবির হাতেই ছিল কোচবিহার পুরসভার কর্মীদের সংগঠন কোচবিহার মিউনিসিপ্যাল ওয়ার্কার্স অ্যান্ড এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন। সেটা এবার রবির হাতছাড়া হল। এতদিন পুরসভার এই শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন অলক রায়। তিনি ছিলেন রবির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ফলে পুরসভার বিভিন্ন কাজের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধাই হচ্ছিল চেয়ারম্যানের। কিন্তু দলের গোষ্ঠীকোন্দলের কারণে এবার সেখানেও পরিবর্তন এল। নতুন সভাপতি হলেন সমীর ঘোষ (কালু)। তিনি তৃণমূলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিকের (হিপ্পি) খুবই ঘনিষ্ঠ। এছাড়াও সংগঠনের কার্যনির্বাহী সভাপতি হলেন তন্ময় ঘোষ এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেন বিশ্বজিৎ লোধ ও রাজু মণ্ডল। এরা সকলেই হিপ্পি-ঘনিষ্ঠ। ফলে এবারে পুরসভার বিভিন্ন সিদ্ধান্তে কিন্তু রবিকে কাউন্সিলারদের পাশাপাশি কর্মচারীদের বাধার মুখেও পড়তে হবে। সাঁড়াশি চাপের মুখে আদৌ পুরসভা কতটা সঠিকভাবে চালাতে পারবেন রবি তা নিয়েও কিন্তু এখন নতুন করে আশঙ্কা দেখা দিল।
যদিও তাঁরা তা মানছেন না। যেমন পুরকর্মীদের সংগঠনের প্রাক্তন সভাপতি অলক রায় বলেন, ‘পদে থেকেই যে শুধু কাজ করা যায় তা নয়, পদে না থেকেও কাজ করা যায়। সেটাই করব। নতুন কমিটিকে স্বাগত জানাই।’ চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘কমিটিতে যেই আসুক তারা পুরসভার স্বার্থে কাজ করুক, কর্মচারীদের স্বার্থে কাজ করুক সেটাই চাইব।’
৩৩ জন পদাধিকারী সহ মোট ৭৪ জনের কমিটি গঠিত হয়েছে এদিন। সংগঠনের নতুন সভাপতি সমীর ঘোষ বলেন, ‘জেলা সভাপতির কথামতো পুর কর্মচারীদের উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা সবসময় কাজ করে যাব।’
রবিবার কোচবিহারের উৎসব অডিটোরিয়ামে কোচবিহার মিউনিসিপাল ওয়ার্কার্স অ্যান্ড এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার মঞ্চে তৃণমূলের জেলা সভাপতি ও কাউন্সিলার অভিজিৎ দে ভৌমিকের সঙ্গে পুরসভার ভাইস চেয়ারপার্সন আমিনা আহমেদ সহ ১২ জন কাউন্সিলার উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রী শুচিস্মিতা দেবশর্মা, পশ্চিমবঙ্গ পুর কর্মচারী ফেডারেশনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বিশ্বময় ঘোষ সহ তৃণমূলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন না।
মঞ্চে পুরসভার অস্থায়ী কর্মচারী পুলেন্দ্রপ্রসাদ ঈশোর বলেন, ‘২৮ বছর ধরে পুরসভায় কাজ করি। কিন্তু আজ পর্যন্ত নিজেকে পুরসভার কর্মী বলতে পারি না।’ বিশ্বময় আবার একথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন। বলেন, ‘সারা রাজ্যে কোনও পুরসভায় ঠিকাদারি প্রথা নেই। তাহলে কোচবিহার পুরসভায় কেন আছে?’ এছাড়া কর্মচারীদের পুরসভার অধীনে আনা, ইপিএফ করা ইত্যাদি নিয়ে তিনি আলোচনা করেন। এরপর মঞ্চে হিপ্পির সঙ্গে কথা বলে সংগঠনের নতুন কমিটির তালিকা ঘোষণা করেন। ভাষণে হিপ্পি খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘পুরসভায় এতদিন এই কমিটি ছিল না থাকার মতো। কারণ পুরকর্মচারীদের সত্যিকারের উন্নয়নে তারা কোনও কাজ করেনি।’
তার আগে আবার শনিবারই রবি-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি পরিমল বর্মনকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। খালি তাই নয়, রবি-গোষ্ঠীর পার্থপ্রতিম রায়ের ঘনিষ্ঠ তৃণমূল যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতি কমলেশ অধিকারীকেও তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে পরপর দু’দিনে সংগঠনগতভাবে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ল রবি গোষ্ঠী।