Cooch Behar | পঞ্চাননকে বেনজির কটাক্ষ নগেনের

Cooch Behar | পঞ্চাননকে বেনজির কটাক্ষ নগেনের

শিক্ষা
Spread the love


গৌরহরি দাস, কোচবিহার: রাজবংশী সমাজ যাঁকে ‘ঠাকুর’ হিসাবে মানেন, যাঁকে রাজবংশী সমাজের সংস্কারক বলা হয়, গ্রেটারের প্রকাশ্য জনসভা থেকে সেই মনীষী পঞ্চানন বর্মার সম্পর্কে একের পর এক বেফাঁস মন্তব্য করলেন সংগঠনের নেতা তথা বিজেপির সাংসদ (BJP MP) নগেন রায়। তাঁর বক্তব্য, রাজবংশী সমাজের জন্য কোনও ভালো কাজ করেননি পঞ্চানন বর্মা (Panchanan Barma)। বরং রাজবংশীদের ভিখারি বানিয়েছেন তিনি।

এমন মন্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজবংশী সমাজে। রাজনৈতিক মহলও এমন ঘটনায়  ক্ষুব্ধ, বিস্মিত। কেউ নগেনকে সমালোচনায় ভরিয়ে দিচ্ছেন, কেউ সন্তর্পণে তাঁর বিষয়ে মন্তব্য এড়াচ্ছেন।

বিষয়টি নিয়ে পঞ্চানন অনুরাগী ও গবেষক এবং তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মন বলেন, ‘উনি পঞ্চানন বর্মার সম্পর্কে কিছু জানেন না। তাঁর কতগুলি বই উনি পড়েছেন, আমি জানি না। উনি যে তপশিলি জাতির শংসাপত্র পেয়েছেন, সেটা কার জন্য পেয়েছেন, সেটা জেনে বলুন। রাজবংশী সমাজের সমস্ত বিজ্ঞ তাঁকে সম্মান জানান। আর উনি কত বড় বিদ্বান হয়েছেন যে পঞ্চানন বর্মাকে সমালোচনা করেন? উনি আগে পঞ্চানন বর্মাকে জানুন, তাঁর বই পড়ুন, তারপর ওঁর কথার উত্তর দেব।’

দ্য কোচবিহার রয়্যাল ফ্যামিলি সাকসেসর্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের মুখপাত্র কুমার মৃদুলনারায়ণ বলেন, ‘পঞ্চানন বর্মা একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় মনীষী। সমাজ সংস্কারে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। যদি কারও মনে হয় যে তাঁর কাজের ক্ষেত্রে কোনও ভুলভ্রান্তি রয়েছে, তা হলেও ব্যঙ্গ করা ঠিক নয়। কারণ ভালো-মন্দ নিয়েই মানুষের জীবন।’

শনিবার কোচবিহারের (Cooch Behar) রাসমেলা মাঠে নগেনপন্থী গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের বড় জনসভা হয়। সভায় হাজার বিশেক লোক হয়। সেই সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার বেনজির সমালোচনা করেন নগেন। তিনি বলেন, ‘পঞ্চানন বর্মা রাজবংশী সমাজকে ভিক্ষাবৃত্তির পেশায় ঠেলে দিয়েছেন। পঞ্চানন বর্মা কোনও ভাষা আন্দোলন করেননি।’ সভায় উপস্থিত হাজার হাজার গ্রেটার সমর্থককে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘পঞ্চানন বর্মা ভালো কাজ করেছেন না খারাপ কাজ করেছেন?’ এতে অনেকে উত্তর দেন, ভালো কাজ করেছেন। তখন তিনি বলেন, ‘ভাই, পঞ্চানন বর্মা কোনও ভালো কাজ করেননি। তিনি ব্রিটিশ কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করে ভারতবর্ষের যত পণ্ডিত ছিলেন সবাইকে ভাগিয়েছেন। তিনি কোচবিহারের রানি ইন্দিরাদেবীর সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলেছিলেন। এখান থেকে মার খেয়ে রংপুরে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়েও আবার অত্যাচার করেছেন।’ সাংসদের মন্তব্য, ‘গোরুর পেটে গোরু, ছাগলের পেটে ছাগল আর ক্ষত্রিয়র পেটে ক্ষত্রিয় জন্মায়। আর এই পঞ্চানন বর্মার কথায়, ক্ষত্রিয় হওয়ার জন্য ক্ষত্রিয়দের মাথা মুণ্ডন করে পৈতে পরে লাঠি নিয়ে মা ভিক্ষম দেহি বলে কাঁধে ঝোলা নিয়ে উপনয়নের জন্য ভিক্ষা করতে হবে। ক্ষত্রিয়দের তিনি সেই যে ভিক্ষার ঝুলি ধরিয়ে দিলেন সে কারণে ক্ষত্রিয়রা আজ সত্যিকারের ভিখারি হয়ে গিয়েছে।’ এরপরেও তিনি একের পর তির্যক মন্তব্য করেন মনীষীর সম্পর্কে।

দূরত্ব বাড়ালেও এখনও খাতায়কলমে দলের সাংসদের সঙ্গে বিরোধে যায়নি জেলা বিজেপি। এদিনও শ্যাম রাখি না কুল রাখি এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিৎ বর্মন বলেন, ‘উনি কী বলেছেন, না বলেছেন সেটা আমার জানা নেই। তাই এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’

পশ্চিমবঙ্গ রাজবংশী উন্নয়ন এবং সংস্কৃতি বোর্ডের চেয়ারম্যান বংশীবদন বর্মন বলেন, ‘পঞ্চানন বর্মা রাজবংশী সমাজের সংস্কারক ও গুণী ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত। তারপরেও নগেন রায় কেন এসব কথা বলেছেন সেটা উনি জানেন।’

রাজবংশী সংগঠনগুলি অবশ্য তাঁদের ‘ঠাকুর’ সম্পর্কে এমন মন্তব্য মেনে নিতে পারছে না। ক্ষত্রিয় সোসাইটির সভাপতি অন্নময়ী অধিকারী বলেন, ‘পঞ্চানন বর্মার জন্যই রাজবংশীরা তাদের ক্ষত্রিয়ত্ব ফিরে পেয়েছে। তারপরেও তাঁর বিরুদ্ধে এ ধরনের কথা কোনওভাবে মেনে নিতে পারছি না। বিষয়টির তীব্র প্রতিবাদ করছি ও নিন্দা জানাচ্ছি।’

রাজবংশী এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক রতন বর্মা বলেন, ‘পঞ্চানন বর্মা যে সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর আন্দোলন ছিল প্রাসঙ্গিক। বর্তমান পরিস্থিতিতে উৎকৃষ্ট কোনও চিন্তাভাবনা যদি সমাজ গ্রহণ করে, সেটা নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে।’

গত কয়েক মাসের নিজের রাজনৈতিক অবস্থানের ধারা বজায় রেখে এদিনও কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপির কড়া সমালোচনা করেন সাংসদ। তাঁর মন্তব্য, ‘আলাদা রাজ্যের নামে ভোট নিয়েও ওরা বেইমানি করেছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *