তুফানগঞ্জ: গদাধর, কালজানি, তোর্ষা, ঘরঘরিয়া এবং রায়ডাক নদীর মিলনস্থল বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা চর বালাভূত। বর্তমানে এই এলাকায় নদীভাঙনে কার্যত রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে স্থানীয়দের। কখনও নদীর জলস্তর বাড়ছে, আবার কখনও কমছে। তাতেই নতুন করে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার ব্যাপক আকারে পাড়ভাঙন শুরু হয়েছে। বর্ষা যত এগিয়ে আসছে, বিপদগ্রস্তদের চিন্তা ততই বাড়ছে। গত এক দশকে অনেকের আবাদি জমি নদীগর্ভে গিয়েছে। নিঃস্ব হয়ে তাঁদের অনেকেই শ্রমিক বনে গিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মইদুল রহমান বলেন, ‘আমরা নদীভাঙনে জেরবার। ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি। ভাঙন রোধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে গোটা গ্রাম।’ বিষয়টি নিয়ে জেলা সেচ দপ্তরের আধিকারিক বদরুদ্দিন শেখের মন্তব্য, বিষয়টি তাঁদের নজরে রয়েছে। ভাঙন রোধে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের বালাভূত গ্রাম পঞ্চায়েতের চর বালাভূত গ্রামটির তিনদিক নদীবেষ্টিত। আর একদিকে বাংলাদেশ। দুটি বুথ মিলিয়ে সেখানে প্রায় ১৮০০ ভোটার রয়েছেন। গদাধর, কালজানি, তোর্ষা, ঘরঘরিয়া এবং রায়ডাক- পাঁচ নদীর মিলনস্থল। পাঁচ নদীবেষ্টিত চর হওয়ায় প্রতিবার বর্ষায় ভেঙে যায় নদীর পাড়। ক্ষতি হয় ফসল ও সম্পত্তির। বছর তিনেক আগে ভয়াবহ বন্যায় এই এলাকাতেই তলিয়ে গিয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এমএসকে স্কুল। ওই সময় স্থানীয় এক পঞ্চায়েত সদস্যের সহযোগিতায় টিনের চালাঘর বানিয়ে চলছে স্কুল।
তবে নদী যেভাবে ক্রমশ বসতির দিকে এগিয়ে আসছে, তাতে গ্রামের বাকি বসতভিটেটুকুও নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।
এদিকে, ভাঙন প্রতিরোধে সেচ দপ্তরের উদ্যোগে ৯০০ মিটার বাঁধ নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমানের কথায়, ‘গ্রামের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা নদীতে গিলেছে। আন্দোলনের জেরে ৯০০ মিটার বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এই অবস্থায় নতুন করে অন্য অংশে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা চাই অবিলম্বে সেচ দপ্তর এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিক।’ শুধু বর্ষাকালেই নয়, শুখা মরশুমেও ভাঙন অব্যাহত থাকে। গত কয়েক বছরে কৃষিজমি হারিয়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়েছেন। তাঁরা দিনমজুরি করছেন। যাঁরা ভিটে হারিয়েছেন, তাঁরা বাড়িঘর কিছুটা দূরে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। আগামীতেও নদীভাঙনের আশঙ্কায় দিশাহারা অবস্থা এলাকার বাকিদের।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মিয়াঁ বলেন, ‘বেশ কয়েক বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ায় আমরা প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। শীঘ্রই বাঁধ না হলে আগামী বন্যায় বাকি জমিটুকু নদীতে তলিয়ে যাবে। তখন পরিবার নিয়ে পথে বসা ছাড়া আর উপায় থাকবে না।’