গৌরহরি দাস, কোচবিহার: ৬-৭ বছর আগেই নির্মল জেলা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল কোচবিহারকে (Cooch Behar)। অথচ প্রশাসনের হিসাবেই দেখা যাচ্ছে গত ৫ বছরে জেলায় বাড়িতে শৌচাগার তৈরি করার জন্য আবেদন করেছেন লক্ষাধিক মানুষ। এরমধ্যে প্রশাসন ৭০ হাজার ৫০০টি শৌচাগারের অনুমোদন দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, ৬-৭ বছর আগে কি তাহলে কোচবিহার জেলা সত্যি সত্যিই নির্মল হয়েছিল? নাকি খাতায়-কলমে নির্মল করা হয়েছিল।
স্যানিটেশন নিয়ে মঙ্গলবার কোচবিহার জেলা পরিষদে রিভিউ বৈঠক হয়। সেখানেই এমন তথ্য উঠে এসেছে। তবে এখানেই শেষ নয়, বৈঠক সূত্রে আরও খবর, রাজ্য থেকে পাঠানো ২৪ জনের (জেলার প্রতিটি ব্লকে ২ জন করে) তৃতীয় পক্ষের একটি টিম গত ১২-১৪ জুন তিনদিন ধরে জেলায় সমীক্ষা চালায়। তাদের সেই সমীক্ষা রিপোর্টেও উঠে এসেছে, জেলায় এখনও বেশ কিছু কাঁচা শৌচাগার রয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু শৌচাগার রয়েছে যেগুলি ব্যবহার করা হয় না।
কয়েক বছর আগে কোচবিহার নির্মল জেলা হিসাবে ঘোষণা হওয়ার পরেও শৌচাগারের জন্য জেলায় এত আবেদন প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে জেলা পরিষদের অ্যাডিশনাল এগজিকিউটিভ অফিসার (এইও) সোমেন দত্ত বলেন, ‘অনেক পরিবার ভেঙে গিয়েছে। সে কারণেই এত আবেদন বলে আমাদের ধারণা।’
ফলে সবমিলিয়ে শৌচাগার নিয়ে কোচবিহার জেলা যে খুব একটা ভালো জায়গায় রয়েছে তা বলা যাবে না। মঙ্গলবারের রিভিউ বৈঠকে স্বচ্ছ ভারত মিশনের ডিরেক্টর সন্তোষা গুব্বি, যুগ্ম সচিব পীযূষ গোস্বামী, জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুমিতা বর্মন, জেলা শাসক অরবিন্দকুমার মিনা, অতিরিক্ত জেলা শাসক সোমেন দত্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্রের খবর, কোচবিহার জেলায় ১ লক্ষ ১৩ হাজার বাংলার বাড়ি তৈরি হচ্ছে। সেগুলিতে যাতে শৌচাগার থাকে তা দেখতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বাংলার বাড়ি যারা সমীক্ষা করেছে, তারা হিসাব দিয়েছে এর মধ্যে প্রায় ৩৬ হাজার বাড়িতে কোনও শৌচাগার নেই। এতেই চমকে ওঠে জেলা প্রশাসন। যদিও সমীক্ষার সেই রিপোর্ট তাদের বিশ্বাস হয়নি। এই অবস্থায় সপ্তাহখানেক আগে প্রশাসনের তরফে জেলার বিডিওদের নির্দেশ দেওয়া হয় এই ৩৬ হাজার বাড়ি আবার সমীক্ষা করে দেখতে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৯-২০ হাজার বাড়ি সমীক্ষা করা হয়েছে। তাদের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী এর মধ্যে তিন হাজারের মতো বাড়িতে শৌচাগার নেই। সমীক্ষা সম্পূর্ণ হলে এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বা তার বেশি হবে বলাই যায়। এর থেকেই পরিষ্কার যে, জেলায় এখনও কয়েক হাজার বাড়িতে শৌচাগারের বন্দোবস্ত নেই।