কোচবিহার: একদিকে এখনও স্থাপত্যগুলোর সামনে বসানো হয়নি হেরিটেজ ফলক। অন্যদিকে, যে কয়টি ফলক লাগানো হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই ইতিমধ্যে নষ্ট হতে শুরু করেছে। কোথাও লোহার ওপর জং ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে লেখা। কোনওখানে লেখা থেকে চলটা উঠে যাচ্ছে, কোথাও আবার কে বা কারা ফলকের লেখা ঘষে তুলে দিতে চাইছে। হেরিটেজ শহর কোচবিহারে হেরিটেজগুলোর সামনে ফলক লাগানোর দু’বছরের মধ্যেই নষ্ট হতে শুরু করায় হেরিটেজ ফলকগুলো নিয়ে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ উঠেছে।
কোচবিহার শহর হেরিটেজ ঘোষণা হয়ে গিয়েছে সেই কবেই। কথা ছিল প্রত্যেকটি হেরিটেজ সাইটের সামনে বসানো হবে সেই সম্পর্কিত তথ্যবহুল একটি ফলক। প্রাথমিকভাবে ১৫৫টি স্থাপত্য হেরিটেজ ঘোষিত হলেও পরবর্তীতে দুটি তালিকা থেকে বাদ যায়। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল হেরিটেজ ঘোষণা হওয়ার এক বছর পার হয়ে গেলেও সেই ফলকগুলো সম্পূর্ণভাবে আজও বসিয়ে উঠতে পারেনি প্রশাসন।
এই হেরিটেজ ফলকগুলো বসানোর দায়িত্বে ছিল মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেট। এমইডি’র এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অভিনন্দন দিন্দা এ প্রসঙ্গে বললেন, ‘আমাদের ফলক বসানোর কাজ চলছে। মোটামুটি ৫০ শতাংশের বেশি কাজ হয়ে গিয়েছে আশা করছি আর কিছুদিনের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব ফলকগুলো বসানোর কাজ শেষ করার।’
এই ফলকগুলোর মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটা অসন্তোষ লোকজনের মধ্যে ছিল। দেবীবাড়ির সামনে বসানো ফলকের লেখা কে বা কারা ঘষে উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কোচবিহারের ইতিহাস মুছে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে সেখানে। খুবই খারাপ অবস্থা কল্যাণ ভবনের সামনের ফলকটির। সেখানে দেখা যাচ্ছে খোসার মতো উঠে যাচ্ছে লেখা। মদনমোহনবাড়ির সামনের ফলক সহ অন্যান্য জায়গার বেশ কিছু ফলকে জং ধরে যাওয়ায় লেখাগুলো অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও ফলকের প্রত্যেকটি স্ক্রুতে জং ধরে গিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি আধিকারিক বললেন, এখানকার জলবায়ুর কারণেই লোহাতে জং ধরাটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। সেটাই হয়েছে। যেহেতু এগুলো বাইরে খোলা জায়গায় লাগানো হচ্ছে সেই কারণে লোহার বদলে এই ফলকগুলো যদি ৩০৪ গ্রেডের স্টেনলেস স্টিল বা পাথরের ওপর তৈরি করা হত, তাহলে এভাবে জং পড়ত না।
১১৪টা ফলক তৈরির জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল বলে এমইডি সূত্রে খবর। অথচ দু’বছর যেতে না যেতেই নষ্ট হতে বসেছে ফলকগুলো। বিশিষ্ট আইনজীবী শিবেন্দ্রনাথ রায় ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, ‘কোচবিহার বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা। এছাড়াও এখানে আর্দ্রতা অনেক বেশি। তাই এই ফলকগুলো লাগানোর সময় সে দিকটা নজর রাখা উচিত ছিল। এছাড়াও হেরিটেজ ফলকগুলো এত ছোট লেখা যে বেশিরভাগ সময়ে চোখেই পড়ে না। এখনও পর্যন্ত কাজই শেষ হল না তার আগেই জিনিস নষ্ট হওয়া শুরু হল। যেটা দিয়ে মানুষকে ইতিহাস বোঝানো হবে সেই ফলকের কাজ এত নিম্নমানের হওয়া কখনোই অভিপ্রেত নয়।’