Cooch Behar | নদীর গতিপথ পরিবর্তনে প্রশ্নে প্রশাসন, আর্থমুভার নামিয়ে বালি উত্তোলন

Cooch Behar | নদীর গতিপথ পরিবর্তনে প্রশ্নে প্রশাসন, আর্থমুভার নামিয়ে বালি উত্তোলন

খেলাধুলা/SPORTS
Spread the love


মেখলিগঞ্জ: মধ্যরাত। ঘুমে আচ্ছন্ন কুচলিবাড়ির অধিকাংশ বাসিন্দা। ঠিক সেই সময়ে কিছু মানুষ বের হন ‘কাজে’। নাইট ডিউটি। কোথায়? সতী নদীর পাড়ে। সঙ্গে থাকে আর্থমুভার। তারপর? রাতের অন্ধকারে একটা আলো জ্বেলে নদী থেকে তোলা হয় বালি। সেই বালি পাচার হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে এই কারবার চলছে। বদলে দেওয়া হচ্ছে নদীর গতিপথ। কোথায় প্রশাসন? কোথায় পুলিশ? কেউ জানে না।

মেখলিগঞ্জ ব্লকের কুচলিবাড়ির খামচাহাটে সতী নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে বালি পাচারে উঠে আসছে দীপঙ্কর রায়ের নাম। তঁার নিজস্ব আর্থমুভার রয়েছে। তিনি বালি তোলার কথা স্বীকারও করেছেন। তঁার দাবি, ‘ভূমি দপ্তরের অনুমতি নিয়েই আমরা বালি তুলি।’ তাঁর দাবির সত্যতা যাচাই করতে মেখলিগঞ্জ ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সুজন রায়কে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

প্রশ্ন উঠছে, ভূমি দপ্তর কি এভাবে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে বালি তোলার অনুমতি দিতে পারে? এ ব্যাপারে আরও একটা অদ্ভুত যুক্তি খাঁড়া করেছেন দীপঙ্কর। তার কথা, ‘বর্তমানে নদীটি এক কৃষকের জমির ওপর দিয়ে গিয়েছে। জমির মালিক নিজে নদীভাঙন রুখতে গতিপথ পরিবর্তন করতে বলেছেন। সেইমতোই বালি তোলা হয়েছে।’ জমির মালিক রঞ্জিত রায় কিন্তু এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

বালি তুলে কোথায় পাচার করা হচ্ছে? সূত্রের খবর, ওই এলাকা থেকে একটি রাস্তা নয়ারহাটের দিকে যায়। বালি তোলার পর তা ট্রলিতে করে রাতের বেলায় কিংবা ভোরে সেই রাস্তা দিয়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই বালি মূলত জলাশয় ভরাটে ব্যবহার করা হচ্ছে। এদিকে, বিভিন্ন জায়গায় আর্থমুভার দিয়ে খনন করে বালি উত্তোলনের ফলে এঁকেবেঁকে বয়ে যাওয়া নদীটির গতিপথ পরিবর্তন করা হচ্ছে। আর এতেই নদীর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন পিকেএম কলেজের ভূগোলের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ রায়।

গতিপথ পরিবর্তন করলে নদীর কী কী ক্ষতি হয়? বিশ্বজিতের ব্যাখ্যা, ‘নদী একটি জীবন্ত সত্তা। তার গতিপথ পরিবর্তন মানে স্বাধীনতা হরণ। এতে নদীর বাস্তুতন্ত্রে প্রভাব পড়বে। নদীর ওপর নির্ভরশীল প্রাণীজগতের ওপরেও পড়বে প্রভাব। নদীর জলের অম্লতা ও ক্ষারের ভারসাম্য নষ্ট হবে। নদীর পাড়ে ভাঙন বাড়বে।’বালি পাচারে প্রশ্নের মুখে পড়েছে শাসকদলও। বিরোধীরা শাসকদলের যোগসাজশ দেখতে পাচ্ছে। বিজেপির মেখলিগঞ্জ দক্ষিণ মণ্ডল সভাপতি বিমল রায়ের কথা, ‘তৃণমূলের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ মদতে বালি পাচার হচ্ছে। নেতারা এর থেকে মাসোহারা পান। তাই বালি পাচার রুখতে প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করছে না।’

বিজেপি এমন অভিযোগ করলেও বালি পাচার নিয়ে কড়া অবস্থান শাসকদলের। কেউ দলের নাম ভাঙিয়ে পাচারে যুক্ত থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত সরকার। তাঁর বক্তব্য, ‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে বালি পাচার নিয়ে একের পর এক পদক্ষেপ করছেন। তাই দল এসবে মদত দেয় না।’

শুধু রাতেই বালি তোলা হচ্ছে এমনটা নয়, মাঝেমধ্যে দিনের বেলাতেও এই কারবার চলছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা রাজকুমার রায়। শুধু খামচাহাট নয়, চিত্ত মোড়ের কাছেও সতী নদী থেকে বালি তুলে পাচার হচ্ছে। পুলিশ এ ব্যাপারে একটি শব্দ খরচ করতে রাজি নয়। আর এতেই সন্দেহটা জোরালো হচ্ছে। কী সন্দেহ? তা উল্লেখ না করলেও চলবে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *