মাথাভাঙ্গা: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকারা নিয়মিত দেরি করে স্কুলে আসেন। সেই অভিযোগকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার মাথাভাঙ্গা-১ ব্লকের পচাগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব বাইশগুড়ি এলাকায় ক্ষোভে ফেটে পড়লেন গ্রামবাসীরা। এদিন সকাল সাড়ে ১১টা বেজে গেলেও প্রধান শিক্ষিকা ও সহকারী শিক্ষিকারা কেউই স্কুলে উপস্থিত ছিলেন না বলে অভিযোগ। স্কুলের দরজা বন্ধ দেখে ঈশিতা দাস, রিয়া দাস, শ্রেজা দাস, সংকেত দাসের মতো আরও পড়ুয়া গাছতলায় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়। বিষয়টি পড়ুয়াদের অভিভাবকদের নজরে আসে। দ্রুত তাঁরা স্কুলে জমায়েত করতে শুরু করেন। খবর পেয়ে গ্রামের অন্য বাসিন্দারাও সেখানে উপস্থিত হন। তারপর ১১টা ৩৫ মিনিট নাগাদ প্রধান শিক্ষিকা স্কুলে পৌঁছোতেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকরা।
ঘটনার খবর পৌঁছোতেই পচাগড় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কুন্তী বর্মন, উপপ্রধান কল্যাণী রায় সহ পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা দ্রুত স্কুলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে মাথাভাঙ্গা-১ চক্র সম্পদ কেন্দ্রের এডুকেশন সুপারভাইজার ধ্রুবজ্যোতি রায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। দীর্ঘ আলোচনার পর প্রধান শিক্ষিকাকে লিখিতভাবে জানাতে বাধ্য করা হয় যে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না। বিদ্যালয় পরিদর্শক মুনমুন রায় বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।’
মাথাভাঙ্গা-১ ব্লকের বিডিও শুভ্রজিৎ মণ্ডল জানান, শিক্ষা পর্ষদের নিয়ম অনুসারে সঠিক সময়ে স্কুল খোলা এবং বন্ধ করা উচিত। আজকের ঘটনার খবর এসেছে এবং বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা বিভাগ স্কুলটির শৃঙ্খলা ফেরাতে সক্রিয় হয়েছে। গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, প্রাথমিক শিক্ষায় নিময়শৃঙ্খলার এই চিত্র দেখলে আগামী প্রজন্ম কী বার্তা পাবে? শিক্ষিকাদের আচরণে স্কুলের পরিবেশ এবং শিশুদের মনোবল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে স্কুলটির পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে বলেও অভিযোগ ওঠে। এক স্থানীয় বাসিন্দা বাবাই দাস বলেন, ‘দিদিমণিরা কখন স্কুলে আসেন আর কখন চলে যান তার ঠিক ঠিকানা নেই।’ বিক্ষোভকারীদের মধ্যে রিঙ্কি কর, বিদ্যুৎ দাসদেরও একই মত। রিঙ্কি বলেন, ‘শিক্ষিকারা নিয়মিত স্কুলে আসেন না। স্কুলের রেজিস্টারে ৪৩ জন পড়ুয়া থাকলেও গড়ে ২০ জনের বেশি পড়ুয়া স্কুলে উপস্থিত হয় না। শিক্ষিকাদের মধ্যে পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করার কোনও উদ্যোগ নেই। পাশাপাশি স্কুলের মিড-ডে মিলে ছাত্রছাত্রীদের খাওয়াদাওয়াও ঠিকঠাক হয় না।’
এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, একাধিকবার এবিষয়ে অভিযোগ জানানো হলেও শিক্ষিকারা কর্ণপাত করেননি। অবিলম্বে তাঁদের স্কুল থেকে অন্যত্র বদলির দাবিও করা হয়। যদিও প্রধান শিক্ষিকা গীতা প্রামাণিক নিয়মিত স্কুলে দেরি করে আসার অভিযোগ অস্বীকার করেন। এদিনের জন্য তাঁর সাফাই, ‘প্রচণ্ড গরমে আমার শরীর ভালো না থাকায় ভেবেছিলাম স্কুলে আসব না। কিন্তু স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা রুবি মণ্ডল আমাকে ফোন করে জানান, তিনি শরীর খারাপের জন্য ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছেন। তখন আমি তড়িঘড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্কুলে আসি। ১১টা ২৫ মিনিটে স্কুলে পৌঁছে দেখি গ্রামবাসীরা স্কুলে দাঁড়িয়ে আছে।’