তুফানগঞ্জ: বালি মাফিয়াদের রুখতে প্রশাসন বহুবার কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কোথায় কী! তুফানগঞ্জের দরিয়াবলাই এলাকায় গদাধর নদীতে আর্থমুভার নামিয়ে প্রকাশ্যেই নদীর বালি লুট করা হচ্ছে। একদিনের নয়, গত কয়েক মাস ধরে এখানে এই ছবি রোজকারই। যেভাবে এখানে নদীর বালি লুট চলছে, বাসিন্দারা বড়সড়ো বিপদের ভয়ে কাঁটা হয়ে রয়েছেন। এছাড়া ট্রলিতে করে যেভাবে বালি পরিবহণ করা হচ্ছে তাতে এলাকার গ্রামীণ রাস্তার রীতিমতো দফারফা হচ্ছে।
রবিবার তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের চিলাখানা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের দরিয়াবলাই এলাকায় দিনভর নদী থেকে বালি চুরি চলল। সপ্তাহের অন্যান্য দিন এখানে নদী থেকে বালি চুরি চললেও ছুটির দিনগুলিতে এই প্রবণতা অনেকটাই বেড়ে যায়। এলাকার বাসিন্দা অষ্টমী দাস রীতিমতো আতঙ্কে, ‘এখানে যেভাবে নদী থেকে বালি তোলা হচ্ছে তাতে যে কোনওদিন নদীবাঁধ ভেঙে জলের তোড়ে গোটা গ্রামটাই ভেসে যাবে। এই বিপদ আগাম ঠেকাতে প্রশাসন যদি আমাদের পাশে না দাঁড়ায় তবে তো খুবই মুশকিল।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দার কথায়, ‘আমরা বাধা দিতে গেলে আমাদের রীতিমতো হুমকি দেওয়া হয়। সমস্যার বিষয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও কোনও কাজের কাজ হয়নি।’ গোটা বিষয়টি ওপরমহলকে জানানো হবে বলে চিলাখানা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রভা দাস আশ্বাস দিয়েছেন। তুফানগঞ্জ মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সুশান্ত সেনগুপ্ত বললেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত নজরদারি চালাচ্ছি। ওই এলাকাতেও নজর রাখা হচ্ছে।’
শুধু দরিয়াবলাই এলাকার গদাধর নদীই নয়, ধলপলের রায়ডাক নদী সহ তুফানগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে বালি চুরি হয়েই চলেছে। প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিনের পর দিন বালি লুট করা হচ্ছে। ধলপলের বাসিন্দা যুগলকিশোর দাস বলেন, ‘ধলপলের চিকলিগুড়ি দ্বিতীয় খণ্ডের সিংপাড়া, দক্ষিণ ধলপল সহ অন্যান্য এলাকা থেকে অবাধে বালি চুরি চলছে।’ এসব ক্ষেত্রে প্রশাসনের একাংশও যুক্ত বলে অভিযোগ। এক বাসিন্দার দাবি, ‘নইলে প্রশাসনকে খবর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বালি মাফিয়ারা এলাকা থেকে কীভাবে উধাও হয়ে যায়?’ দরিয়াবলাই এলাকার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ সরকারের কথায়, ‘যেভাবে প্রতিনিয়ত বালি চুরি হচ্ছে, তাতে আমাদের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। অনেকটাই গভীর গর্ত করে বালি তোলা হচ্ছে। এর ফলে বাঁধের উপর প্রভাব পড়বে। ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে।’
তুফানগঞ্জ মহকুমা নদী বাঁচাও কমিটির সেক্রেটারি সরোজ পঞ্চানন বললেন, ‘অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বালি তোলা হলে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হতে পারে। এর জেরে বড়সড়ো দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।’ সমস্যা মেটাতে দ্রুত ব্যবস্থার দাবি জোরালো হয়েছে।