Cooch Behar | চার বছরের ছেলের সামনেই ‘আত্মঘাতী’ বধূ! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন গ্রামবাসীরা 

Cooch Behar | চার বছরের ছেলের সামনেই ‘আত্মঘাতী’ বধূ! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন গ্রামবাসীরা 

খেলাধুলা/SPORTS
Spread the love


তুফানগঞ্জ: চূড়ান্ত অমানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকল তুফানগঞ্জের দেওচড়াই গ্রাম পঞ্চায়েতের সন্তোষপুর এলাকা। চার বছরের ফুটফুটে সন্তানের সামনেই বিষ পান করে ‘আত্মঘাতী’ হলেন এক গৃহবধূ। আর তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন গ্রামবাসীরা।  সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবিতে স্বামীর বাড়িতে যাওয়াই রেশমি বিবি নামে বছর পঁয়ত্রিশের ওই গৃহবধূর কাল হল বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। এই ঘটনায় রবিবার তুফানগঞ্জ থানায় স্বামী সাহাজাদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতার বাপের বাড়ির লোকজন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রেশমি বিবির বাড়ি তুফানগঞ্জ থানার মারুগঞ্জের পাকুড়তলা এলাকায়। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তরা এলাকা থেকে পালিয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

বছর ১৪ আগে পুণ্ডিবাড়ির বৈকুণ্ঠপুরের বাসিন্দা হাফিজুল মিয়াঁর সঙ্গে দেখাশোনা করে মারুগঞ্জের রেশমির বিয়ে হয়। তবে বিয়ের পর বনিবনা না হওয়ায় স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। তারপর মারুগঞ্জ এলাকায় বাপের বাড়িতে ফিরে আসেন রেশমি। সেসময়ে দেওচড়াই গ্রাম পঞ্চায়েতের সন্তোষপুরের বাসিন্দা তথা প্যান্ডেল ব্যবসায়ী সাহাজাদ ব্যাপারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাঁর।

রেশমির পরিবারের অভিযোগ, প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে চার বছর আগে রেশমিকে বিয়ে করে কোচবিহারের একটি ভাড়াবাড়িতে রেখেছিল সাহাজাদ। তাঁদের চার বছরের একটি পুত্রসন্তানও রয়েছে। গত পাঁচ মাস আগে রেশমির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সাহাজাদ। ফোন করলেও ফোন কেটে দিত বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে সন্তানকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন ওই গৃহবধূ। শনিবার সন্ধ্যায় স্বামীর সন্তোষপুরের বাড়ির ঠিকানায় হাজির হন রেশমি। সেখানে গিয়ে রেশমি দেখেন, সাহাজাদ আগে থেকেই বিবাহিত। তার আরেকটি সন্তানও রয়েছে। রেশমিকে দেখে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে অস্বীকার করে সাহাজাদ। তারপরই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় হতভম্ব রেশমি ভেঙে পড়েন।

সেসময়ে সাহাজাদের প্রথম পক্ষের স্ত্রী রেশমিকে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেন বলে অভিযোগ ওঠে। দুই বধূর চিৎকার শুনে সেই বাড়ির সামনে ভিড় জমান গ্রামবাসীরা। এলাকাবাসীর দাবি, সেসময়ে আচমকাই নিজের সন্তান ও এলাকাবাসীর চোখের সামনে রেশমি বিষপান করেন। বিষপান করে ছটফট করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। কিন্তু তাঁকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে রেশমিকে উদ্ধার করে তুফানগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়ে দেন, রেশমি আর বেঁচে নেই।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাহেব আলির বক্তব্য, ‘দীর্ঘক্ষণ ধরে চিৎকার শোনার পর আমরা এগিয়ে যাই। কিন্তু আমাদের দেখামাত্রই সাহাজাদের স্ত্রী চিৎকার করে বলতে শুরু করে, এখানে কাউকে আসতে হবে না, সবাই চলে যাও। সেসময়ে বাড়ির গেটের সামনে বিষপান করে রেশমি নামে ওই মহিলা ছটফট করতে থাকেন। তবে আমাদের কাউকেই এগিয়ে যেতে দেয়নি সাহাজাদের স্ত্রী। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আমরাই পুলিশকে খবর দিই।’

মৃতের দাদা রিয়াজুল হক বলেন, ‘স্কুলে ছেলের ভর্তির জন্য জন্ম শংসাপত্রের প্রয়োজন। সেই শংসাপত্রে নিজের সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবিতেই স্বামীর বাড়িতে গিয়েছিল বোন। আর সেটাই হল তার কাল। সকলের সামনে বোন বিষপান করলেও প্রতিবেশীরা কেউ এগিয়ে আসেননি। বোনের নম্বরে ফোন করার পর ভাগ্নে ফোন তুলে আমাদের জানায়, মা আর নেই। বোনকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে। তাই দোষীদের শাস্তির দাবিতে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি।’

স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য খদিজা বিবির কথায়, ‘এলাকাবাসীর মুখে ঘটনার কথা শুনেছি। এটা সত্যি নিন্দাজনক। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে অনুরোধ করব।’ মৃতের বাড়ির মালিক ঝুলন কান্তি বলেন, ‘চার বছর ধরে আমার বাড়িতেই রেশমি ভাড়া থাকত। কয়েক মাস ধরে তার স্বামী আর যোগাযোগ রাখছিল না। ঘরভাড়া তো দূর, বাচ্চার খাবার জোগাড় করাও মুশকিল হয়ে উঠছিল। বাধ্য হয়ে আমি বাবুরহাটের একটি আবাসিকে তাকে কাজে ঢুকিয়ে দিই। ওর মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি হতভম্ব। খবর পেয়েই আমি তুফানগঞ্জ হাসপাতালে ছুটে এসেছি।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *