কোচবিহার: এক–দু’হাজার টাকা নয়, কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিবিইউ) পুলিশ পিকেটিং বাবদ কোচবিহার কোতোয়ালি থানা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ৯ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা চেয়ে আবারও বিল পাঠাল। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, গত বছরের শেষের দিকে পিবিইউয়ের উপাচার্যের কাছে কোতোয়ালি থানার তরফে প্রথমে এই বিল পাঠানো হয়েছিল। তখন অবশ্য বিষয়টি প্রকাশ্যে আসেনি। তবে এতদিনেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই বিল না মেটানোয় কোতোয়ালি থানা কর্তৃপক্ষ দু’দিন আগে বর্তমান রেজিস্ট্রার আব্দুল কাদের সাফেলিকে মেলে এবিষয়ে ফের অবগত করে। আরও একবার ওই বিল পাঠানো হয়েছে। আর্থিক অভাবের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে প্রয়োজন অনুযায়ী বই নেই, ল্যাবের যন্ত্রপাতি নেই। এই পরিস্থিতিতে এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে ব্যাপক শোরগোল শুরু হয়েছে।
রেজিস্ট্রার আব্দুল কাদের সাফেলি বলেন, ‘৯ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা চেয়ে সম্প্রতি কোতোয়ালি থানা থেকে আমার কাছে বিল পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি আমি উচ্চশিক্ষা দপ্তরে জানাব। তারা যেভাবে বলবে আমরা সেভাবে ব্যবস্থা নেব।’ পাশাপাশি, বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রশ্নও তুলেছেন। রেজিস্ট্রার বললেন, ‘আমরা এতদিন বিশ্ববিদ্যালয় চালাচ্ছি। এখানে কোনওদিন চুরি–ছিনতাই হয়নি বা ডাকাতও পড়েনি। তাহলে এখানে পুলিশ পিকেটিংয়ের কেন প্রয়োজন হল জানি না। লাইব্রেরিতে বই, প্র্যাকটিকাল ও খেলাধুলোর সামগ্রীর অভাব রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ পিকেটিংয়ের জন্য এত টাকা খরচ বিলাসিতা বলেই মনে করছি।’
তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের ইগোর লড়াইকে কেন্দ্র করে মাসকয়েক আগে পিবিইউ ক্যাম্পাস চত্বর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। সেটা শেষপর্যন্ত এতটাই খারাপ পরিস্থিতিতে যায় যে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য নিখিলচন্দ্র রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আব্দুল কাদের সাফেলিকে শোকজ করেন। পরে তাঁকে সাসপেন্ডও করেন। এর জেরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কর্তৃপক্ষ আইনের দ্বারস্থ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ পিকেট বসে। পুলিশ পিকেট বসালে এজন্য পুলিশকে টাকা দিতে হবে বলে আদালতের নির্দেশে বলা ছিল। এরপর তিন মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেই পুলিশ পিকেট ছিল। সেই পুলিশ পিকেটিংয়ের বিল হিসাবেই কোচবিহার কোতোয়ালি থানা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এই বিল পাঠিয়েছে। পুলিশের বিল পাঠানোর হিসাবে দেখা গিয়েছে একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেকটরের জন্য (এএসআই) মাসে ৭৪ হাজার ৫২ টাকা করে তিন মাসের বিল ২ লক্ষ ২২ হাজার ১৫৬ টাকা দেখানো হয়েছে। এছাড়া ৬২ হাজার ২২০ টাকা হিসাবে চারজন কনস্টেবলের তিন মাসের বিল বাবদ ৭ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৪০ টাকা দেখানো হয়েছে। সবমিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ৯ লক্ষ ৬৮ হাজার ৭৯৬ টাকার বিল ধরানো হয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক হইচই শুরু হয়েছে।
কী কারণে হঠাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ পিকেটিং বসাতে হল? রেজিস্ট্রার বললেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বশাসিত সংস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে পুলিশের সাহায্য না চাইলে পুলিশ সেখানে যেতে পারে না। নিশ্চয়ই তৎকালীন উপাচার্য এটা চেয়েছিলেন। উনি হাইকোর্টের মাধ্যমে এটা করেছেন।’ প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য নিখিলচন্দ্র রায়কে বহুবার ফোন করা হলেও সাড়া না দেওয়ায় তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি।