বক্সিরহাট: স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০৮। অথচ শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন। তিনি আবার কোনওদিন অসুস্থ হলে বা কাজের জন্য ছুটি নিলে স্কুলটাই ছুটি হয়ে যায়। এভাবেই কোনওরকমে পড়াশোনা চলছে তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের গড়ভাঙ্গা জুনিয়ার হাইস্কুলে।
স্কুলটিতে নেই পর্যাপ্ত ক্লাসরুমও। দুটো ক্লাসরুমে পঠনপাঠন চলছে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের। অভিভাবকদের দাবি, একসঙ্গে গাদাগাদি করে ক্লাসে বসায় গরমে মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ছে পড়ুয়ারা। আইন অনুসারে বিনামূল্যে শিক্ষা সবার প্রাপ্য। কিন্তু স্কুলে যদি শিক্ষকই না থাকেন, তাহলে সরকারের এই আইন রেখে কোনও লাভ হচ্ছে কি? স্কুলের একমাত্র শিক্ষক সঞ্জয় দত্তের কথায়, ‘একার পক্ষে ১০৮ জন পড়ুয়াকে সামলানো যথেষ্ট কষ্টকর। কোনওরকমে চলছে স্কুল। কমপক্ষে আরও দুজন শিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে। স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানিয়েছি।’ কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।
২০১২ সালে স্কুলটি তৈরি হয়। শুরু থেকে একজনই শিক্ষক ছিলেন। ২০১৮ সালে একজন গ্রুপ-ডি কর্মী যোগ দেন। সম্প্রতি ওই শিক্ষাকর্মীও চাকরি হারিয়েছেন। শিক্ষক জানালেন, রোজ ৯০-৯৫ জন পড়ুয়া উপস্থিত থাকে। একেকটি ঘরে দুটো শ্রেণির পড়ুয়ারা বসে।
প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে পড়ুয়ারা। তাই অনেকেই তাঁদের ছেলেমেয়েদের স্কুল থেকে সরিয়ে প্রায় পাঁচ কিমি দূরে অন্য হাইস্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা সুবোধ সরকার বললেন, ‘শিক্ষকের ভরসায় বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাই। তবে ওই স্কুলে শিক্ষকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাই আমরা চাই স্কুলে আরও শিক্ষক আসুক।’
স্কুলটিতে নেইয়ের তালিকাটা অনেকটাই বড়। ডাইনিং শেড না থাকায় কখনও বারান্দায়, কখনও মাঠে খাবার খেতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। স্কুলে নেই বেঞ্চ, অফিসঘর।
শিক্ষকের সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন রামপুর সার্কেলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক বিপ্লব সিংহ। তাঁর কথায়, ‘এদিকের প্রায় সব স্কুলে একই অবস্থা। আপার প্রাইমারিতে নিয়োগ হলে সমস্যা মিটবে। আর শ্রেণিকক্ষের জন্য জেলা শিক্ষা দপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো রয়েছে। অনুমোদন এলে কাজ হবে।’